শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নিষিদ্ধ হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার রাজধানীতে নিষিদ্ধঘোষিত হিজবুত তাহরীরের ২ সদস্য গ্রেপ্তার বগুড়ায় আইন কর্মকর্তা নিয়োগ বিএনপি-জামায়াতপন্থি ১০৭ জন অতি বৃষ্টির কারণে লালমনিহাট জেলায় বন্যা নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত বগুড়ায় ট্রাক পরিবহনের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার আত্মসাৎ ও মামলা টিএমএসএস সদস্যদের (RAISE) প্রকল্পের উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দীর্ঘ ১৩ বছর পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে চাকুরী ফেরত পেলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক আশুলিয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিত্যক্ত চুল পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাগ্য বোনার চেষ্টা আদিতমারীর নারীদের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর হলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম

কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা, দাদি কারাগারে

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭
  • ১৩৮ বার পড়া হয়েছে
আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা, দাদি কারাগারে

বাংলার প্রতিদিন ডটকম, 

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় কিশোরী আজিজাকে (১৩) পুড়িয়ে হত্যা মামলায় তার দাদি তমুজা বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শিবপুর থানার পুলিশ রোববার তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সৈয়দুজ্জামান জানান, মোবাইল চুরি নয়, চাচির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখে ফেলার কারণেই পঞ্চম শ্রেণির স্কুলছাত্রী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেছেন আটক তমুজা বেগম (নিহত আজিজার বাবার ফুফু)। আর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আজিজার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে।

গত শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজিজার মৃত্যু হয়।

আজিজা শিবপুর উপজেলার খৈনকুট গ্রামের আবদুস সাত্তারের মেয়ে। সে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে পড়ত। তার বাবা সাত্তার স্থানীয় একটি মুরগির খামারে চাকরি করেন।

এদিকে আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তার চাচি বিউটি বেগমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে শিবপুর থানায় মামলা করেছেন নিহতের বাবা আবদুস সাত্তার। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিউটি বেগমের মা সানোয়ারা বেগম, তার ভাই রুবেল মিয়া ও তার ফুফু শাশুড়ি তমুজা বেগম। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো তিনজনকে আসামি করা হয়।

নিহত আজিজার ভাই সুজন ও মা রেহেনা বেগম জানান, শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পাশের স্থানে গাছের পাতা কুঁড়ানোর সময় আজিজার চাচি বিউটি বেগম ও তার ভাই রুবেল মিয়া একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আজিজাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। রাত  সাড়ে ৮টার বাড়ির অদূরে একটি উঁচু টিলায় নিয়ে আজিজার শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়ে। পরে পাষণ্ডরা তার শরীরে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আজিজার চিৎকারে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আগুনে পুড়তে দেখে। পরে লোকজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে তার শরীরের অনেকখানি পুড়ে ঝলসে যায়।  পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে রাত দেড়টার দিকে আজিজাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

নিহতের ভাই সুজন জানান, আট-দশ দিন আগে চাচি বিউটি বেগমের একটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে। চাচির মা ও অন্য স্বজনরা এর জন্য আজিজাকে সন্দেহ করে। তারা হুমকি দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল ফোন ফেরত না দিলে আজিজাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে।

শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন  অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজিজার মৃত্যুর খবর জেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসন জুড়ে। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে পুলিশ। এরই জের ধরে সন্দেহজনকভাবে বিউটি বেগমের ফুফু শাশুড়ি তমুজা বেগমকে আটক করে পুলিশ। ওই সময় আটক তমুজা পুলিশের কাছে নেপথ্যের ঘটনা তুলে ধরেন।

পুলিশের হাতে আটক তমুজা বেগম বলেন, তিন মাস আগে বিউটি বেগমের স্বামী মালয়েশিয়া যান। স্বামী বিদেশে  যাওয়ার পর বিউটি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। প্রেমিকের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা শুরু করেন। এরই মধ্যে বিউটি বেগমের সঙ্গে তার প্রেমিকের অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য দেখে ফেলে স্কুলছাত্রী আজিজা। এর পর থেকেই আজিজাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা শুরু করেন বিউটি। পরিকল্পনা অংশ হিসেবে মোবাইল ফোন চুরির নাটক সাজানো হয়। মোবাইল চুরির অপবাদ দেওয়া হয় আজিজা ও তার বোনকে।

এদিকে শিশু আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে নিহতের পরিবার। কান্নার রোল পড়ে এলাকাজুড়ে। সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আজিজার মা রেহেনা বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে চোর না। পড়াশোনার পাশাপাশি সে আমার সাথে কাজ করে। বেশ কয়েকদিন ধরেই বিউটি আজিজার পিছু নেয়। ক্ষণে ক্ষণে তাকে বকা-ঝকা করত। কিন্তু সে যে আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মারবে সেটা বুঝতে পারিনি।’

নিহতের বোন মারুফা বলেন, ‘যে মোবাইল চুরির কথা বলেছে সেটা চাচির হাতেই ছিল। ইচ্ছে করে আমাদের ওপর অপবাদ দিয়েছে। আমার বোনের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের যেন ফাঁসি হয়।’

এদিকে আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি আশা লতা সাহা। তিনি বলেন, নিজের দোষ ঢাকতে একটি শিশুকে বলি চড়ানো হয়েছে। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে এর ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি। একই সাথে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। প্রয়োজনে সংগঠনের পক্ষ থেকে ভিকটিমের পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451