বাংলার প্রতিদিন ডটকম,
দিন যতই যাচ্ছে আর মোটিফ পাল্টাচ্ছে নরসিংদীর আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর কিশোরী আজিজা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যার তদন্ত। চাচির মোবাইল ফোন চুরির সঙ্গে নতুন সংযোজন হয়েছে কিশোরী আজিজার সঙ্গে কথিত প্রেমিকের অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনা।
একদিকে মোবাইল ফোন চুরির অপরাধে চাচি ও তাঁর স্বজনরা মিলে আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ অন্যদিকে প্রেমিকের কাছে প্রতারিত হয়ে নিজেই আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা নাকি বাল্যবিবাহের নাটক সেটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
নরসিংদীতে কিশোরী আজিজা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আমেনা বেগম। এই ঘটনায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামিসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রধান আসামি আজিজার চাচি বিউটি বেগম ও বিউটির মা সানোয়ারা বেগম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত দুদিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
অন্যদিকে নরসিংদী সদর থেকে ডিবি পুলিশ আজিজার কথিত প্রেমিক নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার রোমান হোসেন (২০), তার বন্ধু কামারগাঁও এলাকার সুজন মিয়া (২১) ও নাগরিয়াকান্দী এলাকার রেজাউল করিমকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে। তারা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া আজিজার বাবার ফুফু পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন।
এসব বিষয় নিয়ে আজ বুধবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার আমেনা বেগম। তিনি বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিউটি বেগমের চুরি হওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে। বিউটি ও তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মামলার এজাহারভুক্ত অপর আসামি রুবেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের আগে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, কিশোরী আজিজার বিয়ে ঠিক করে পরিবারের লোকজন। কিন্তু বিয়েতে মত না থানায় আজিজা গত শুক্রবার তার প্রেমিক রোমানের সঙ্গে দেখা করতে শিবপুর উপজেলার বাড়ি থেকে নরসিংদী শহরে আসে। ওই সময় রোমান, তার বন্ধু সজিব, রেজাউল ও সুজন কিশোরী আজিজাকে নরসিংদী শহরের স্লুইচ গেইট এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রেমিক রোমান ও আজিজার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে বন্ধুরা। ওই অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে রোমানের বন্ধুরা আজিজার সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। এরপর আজিজার ভাইকে ফোন করে আজিজাকে ছাড়িয়ে নিতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় আজিজার অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আজিজার ভাই এতে অসম্মতি জানালেও খালা ২০ হাজার টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পথে কুঠির বাজারের মিজানুর রহমানের দোকান থেকে আজিজা এক লিটার কেরোসিন তেল কিনে। পরে বাড়ির অদূরে তাকে দগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
পুলিশ সুপার আমেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, নরসিংদী শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রেমিক রোমান হোসেন, তার দুই বন্ধু সুজন মিয়া ও রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার নরসিংদীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ ওয়ায়েজ আল করনির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিউটি বেগমের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনসেটটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, আজিজা প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার টাকার জন্য চাচির মোবাইল ফোনটি চুরি করেছিল।
এদিকে আজিজা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিবপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুরে মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি বিউটি বেগম ও তার মা সানোয়ারা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ ওয়ায়েজ আল করনির আদালতে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বিচারক দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলার এজাহারভুক্ত অপর আসামি রুবেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা উদঘাটিত হবে।
পুলিশের দাবি প্রত্যাখ্যান
এদিকে পুলিশের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন মামলার বাদী নিহত আজিজার বাবা আবদুস সাত্তার ও মা রেহানা বেগম। বিকেলে তাঁরা সাংবাদিকদের বলেন, আজিজা ১৪ বছরের মেয়ে। এটা প্রেম করার বয়স না। আর বয়স কম থাকায় মালয়েশিয়ার এক ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তারা না করে দেন। ঘটনার দিন আজিজাকে অপহরণ করে যারা টাকা চেয়েছিল তারা তাদের চেনেন না। তাদের ধারণা, বিউটি ও তার লোকজনই আজিজাকে অপহরণ করে টাকা দাবি করে। আর টাকা না পাওয়ায় তাদের মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
গত শুক্রবার রাতে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার খৈনকুট গ্রামের বাড়ির পাশে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্রী আজিজা বেগমকে। এই ঘটনায় নিহতের বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে শনিবার রাতে শিবপুর মডেল থানায় আজিজার চাচিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিউটির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখে ফেলায় তারা আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।