মোঃ নুর আলম, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয়
আসন-৯ দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন মাঠে। আওয়ামীলীগ, বিএনপি,
জামায়াত ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেউই বসে নেই। নির্বাচনকে ঘিরে
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শুরু হয়েছে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাস্তার মোড়ে নেতানেত্রীদের ছবি স¤॥^লিত
বিলবোর্ড, পোস্টার সাঁটিয়ে ও বিভিন্ন দিবসগুলোতে শ্রদ্ধাঞ্জলির শুভেচ্ছা ব্যানার দিয়ে জমজমাটভাবে প্রচারণা
চালাচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যার্শীরা। দলীয় বর্ধিত সভা, প্রতিটি ইউনিয়নে সমাবেশ, বিয়ে-শাদীতে
অংশগ্রহণ, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক অনুদান, অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো,
প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা প্রদান করছেন। অনেকেই কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের আশায়
সিনিয়র নেতাদের নিকট করছেন গ্রুপিং লবিংও। চিরিরবন্দর ও খানসমা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা
গেছে, চিরিরবন্দর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ২ লাখ ১০ হাজার ৩১৩জন ও খানসামা উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ১ লাখ
২১ হাজার ৩৬৯ জন ভোটার সর্বমোট এ আসনে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৬৮২ জন ভোটার রয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ
নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি প্রার্থীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-
সমালোচনা। যাঁরা মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন এলাকায় তাদের যাতায়াত বেড়ে গেছে। তৃর্ণমূল পর্যায়ের
নেতাকর্মীদের সাথে কুশল-শুভেচ্ছা বিনিময়, ছবি স¤॥^লিত পোস্টার-ব্যানার করে এলাকায় লাগানো, জ্যেষ্ঠ নেতাদের
আনুকুল্য লাভের চেষ্টা সম্ভাব্য প্রার্থীদের এসব তৎপরতা চোখে পড়ছে। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম
হলেন, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও কেন্দ্রিয়
কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মানু ও ঢাকা ল্যাব-এইডের অর্থোপেডিক্স সার্জন ডা. এম
আমজাদ হোসেন। অপরদিকে, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য
আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান মিয়া। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি’র হাফিজুর রহমান সরকার।
বিএনপি জোটের মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠতে পারেন জামায়াত নেতা চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের
দু’বারের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আফতাবউদ্দীন মোল্লা ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) নেতা আশরাফ আলী
খান। অবশ্য এ পর্যন্ত জাতীয়পার্টির কোন প্রার্থীর নাম এখনো আলোচনায় আসেনি। আওয়ামীলীগের দলীয় সূত্রে
জানা গেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পুনরায় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে নিয়মিত দলীয় কর্মসূচী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
রাখছেন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় সাধারণ মানুষ ও তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীরা তাঁর প্রতি অনেকটা দূর্বল।
তিনি মনোনয়ন লাভ করলে দল আবারো জয়লাভ করবে বলে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী।
অন্যদিকে, সাবেক হুইপ ও কেন্দ্রিয় কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মানু নির্বাচন করার
আশায় রয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র
প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বির্তকিত হন। তিনি ওই নির্বাচনে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার ভোট পান। ওই নির্বাচনে
নৌকা প্রতিক নিয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিজয়ী হন। সে সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে দলীয় প্রধান শেখ
হাসিনার বিরুদ্ধে বিষদগার করে বক্তব্য দেয়ার কারণে নেতাকর্মীরা তাঁর ওপর ক্ষুদ্ধ হন। তবে এসব প্রতিকুলতা কাটিয়ে
তিনি মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড়ে শামিল হয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা ল্যাব-এইডের অর্থোপেডিক্স সার্জন ডা. এম
আমজাদ হোসেনও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে তদবির অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে, ২০০১ সালের নির্বাচনে
বিএনপি-জামায়াত জোটের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান মিয়া। বিএনপির এ নেতার
রয়েছে আকাশচু¤ি॥^ জনপ্রিয়তা। তিনিও রয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায়। বিএনপির এ নেতা ২০০৬
সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্রভাবে ডাব প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেন। তারপরেও
বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তাঁকেই ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন করে। ফলে ২০০৮ সালে বিএনপি তাঁকে
পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দেয়। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আখতারুজ্জামান মিয়া নেতাকর্মীদের
নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় করে চলেছেন। আওয়ামীলীগ সরকারের দমন-নিপীড়ন সহ্য করে সাধারণ
নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে মাঠে রয়েছেন। চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক ও নশরতপুর
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুর-এ- আলম সিদ্দিকী নয়ন জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের অনেক দমন-নিপীড়ন,
হামলা-মামলা সহ্য করেও আমরা সাধারণ নেতাকর্মীরা আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে মাঠে রয়েছি।
এখানে কেউ হঠাৎ করে প্রার্থী হয়ে আসলে তৃর্ণমূলের সাধারণ নেতাকর্মীরা তাঁকে মেনে নেবে না। অপরদিকে,
শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকার ২০০৬ সালে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেন। তিনি ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে
তার কিছু শুভাকাঙ্খী জানান। এদিকে, জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতির মাঠে নামতে না পারলেও কয়েকজন নেতা জানান-
জোটের নিকট তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটের বৈতরণী পার হতে হলে বিএনপি’র তাদের প্রয়োজন রয়েছে।
২০১৪ সালের আগে ও পরে তাদের ওপর দিয়ে হামলা-মামলার অনেক ধকল গেছে। এজন্য চিরিরবন্দর উপজেলার দু’বারের উপজেলা
পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জামায়াতের সাবেক জেলা আমির মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আফতাবউদ্দীন মোল্লা
কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিক বড় বিষয় নয়। কর্মী-সমর্থকদের
আয়ত্ত্ধেসঢ়;ব রাখতে জামায়াত যেকোন প্রতিক নিয়ে ভোটের ময়দানে থাকতে প্রস্তুত আছে। এ আসনে বিএনপি’র
নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরীকদল জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগপা)’র কেন্দ্রিয় নেতা আশরাফ আলী খান
মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় রয়েছেন। তিনি জাগপা’র একক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে
স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা জানান, আওয়ামীলীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও বিএনপি’র
আখতারুজ্জামান মিয়ার মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্ধিসঢ়;দ্বতা হবে। যে দলেরই হোক কেন অন্য কোন প্রার্থী মাঠে সুবিধা
করতে পারবে না। ছবি আছে।