মোঃ আব্দুর রহিম, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলার
শ্রীমঙ্গলে শহরের সুনামধন্য একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষককে তাৎক্ষনিক মোবাইল
কোর্টের মাধ্যমে ১ মাসের কারাদন্ড প্রদান। অদ্য ০৮ই নভেম্বর বুধবার
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম এই রায়
প্রদান করেন। ভুবেন্দ্র শমার্র(৪০) বাড়ী হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাঠ । সে
উদয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৩-৪ বছর যাবত খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে
দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
বাংলাদেশ প্রতিক্ষণ পত্রিকার সম্পাদক আলতাফ খাঁন নিকট শ্রীমঙ্গল উদয়ন
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীর অভিভাবক মোঠো ফোনে অভিযোগ করেন
যে,বিদ্যালয়ে এস.এ.সি পরীক্ষার ফরম ফি বাবদ অতিরিক্ষ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু টাকা নিয়ে কোন রশিদ প্রদান করা হচ্ছে না। অভিযোগটি শুনার পর
সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিক্ষণের টিম নিয়ে অদ্য ০৮ই নভেম্বর বুধবার বেলা
১২.৩০ ঘটিকার সময় বিদ্যালয়ে যান।
এসময় উপস্থিত অভিযোগকারী অভিভাবকদের সাথে নিয়ে উক্ত বিদ্যালয়ের সহকারী
শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেকের সাথে বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি জানান
যে, নিয়মের ভিতরেই নির্দিষ্ঠ পরিমান টাকা ছাত্রীদের নিকট থেকে নেওয়া
হচ্ছে। শুধুমাত্র কোচিং ফি বাবদ অতিরিক্ত ১০৫০টাকা এ বছর থেকে
বাধ্যতামূলক ভাবে নেওয়া হচ্ছে।
আর অফিসে কাজের বেশী জামেলা হওয়ার কারণে টাকা প্রাপ্তির রশিদ আগামী ১৪ই
নভেম্বর প্রদান করা হবে। সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেকের জবাব শুনে
বাংলাদেশ প্রতিক্ষন টিম যখন বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে আসবে সে সময় চার জন
ছাত্রী এসে দাড়ায়। একজন ছাত্রী ভীত ও কান্না জড়িত কন্ঠে সম্পাদককে বলে,
ভাই আমাকে বাচাঁন। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমার সর্বনাশ করতে চাচ্ছে।এমন
কথা শুনে বিষয়টি কি তা নীর ভয়ে বলার জন্য সম্পাদক জনৈক ছাত্রীকে (১৪)
বলেন। তখন সে জানায় যে, ”আমি ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। এবারের এস.এ.সি
পরীক্ষার্থী। অত্যান্ত গরীব পরিবারের মেয়ে হওয়ায় এবং ভাই-বোন বেশী হওয়ায়
আমি নিজে টিউশনী করে লেখাপড়া করি।
পরীক্ষার ফরম ফি বাবত ৩৪৫০/- টাকা আমার কাছে না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের
খন্ডকালীন শিক্ষক ভুবেন্দ্র শর্মা(৪০) স্যারকে বিষয়টি জানাই। তিনি আমার
নিকট থেকে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি আবেদন লিখতে বলেন।সে সাথে তিনি
আশ্বাসদেন যে তিনি আলাপ করে টাকা কমিয়ে দিবেন। পরবর্তীতে জৈনক ছাত্রী তার
ছোট বোনকে নিয়ে শর্মা স্যারের বাসায় যায় কোচিং এ পড়ার বিষয়ে কথা বলতে। সে
সময় শিক্ষক উক্ত ছাত্রীর পিঠে হাত দিয়ে কথা বলতে থাকলে সে স্যারের কু-
মতলব বুঝতে পেরে বাসা থেকে চলে আসে।
কিন্তুু শিক্ষক ভুবেন্দ্র শর্মা হাল ছাড়েননি।তিনি আমাকে মোবাইলে প্রস্থাব
করেন যে, তাহার বাসায় একা যেতে । এমনকি মোবাইলে তিনি বিভিন্ন নোংরা কথা
বলেন। অবশেষে আজকে সকালে স্যার মোবাইলে বলেন যে, তোমাদের ম্যডাম (স্যারের
স্ত্রী) বাসায় নেই, তোমার কাজ হয়ে গেছে। ২০০০টাকা দিলে হবে।তুমি আমার
বাসায় এসে আমার বিছানায় সময় দিয়ে যাও।
আমি এসব শুনে হতবম্ভ হয়ে যাই। বিষয়টির বিপদজনক ও আমার ক্ষতি হওয়ার
স্বম্ভাবনা দেখে আমি আমার বান্ধবীদের জানাই।তারা আমাকে নিয়ে স্যারের
বাসায় যায়। কিন্তু স্যার তাদের দেখে খুবই রাগান্বিত হয়ে আমার সাথে খারাপ
আচরণ করেন। এমতাবস্থায়, আজকে পরীক্ষার ফরমের টাকা দেওয়ার শেষ দিন আমি কি
করব ভাইয়া বলেন?
তখন বাংলাদেশ প্রতিক্ষণ পত্রিকার সম্পাদক বিষয়টি শুনে সাথে সাথে
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ কে.এম নজরুল ইসলামকে জানান। তিনি থানায়
লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। বাংলাদেশ প্রতিক্ষণ টিম ছাত্রীদের নিয়ে
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জের রুমে যান এবং সম্পূর্ণ ঘটনাটি শুনে
তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান।
তিনি তাৎক্ষনিক মোবাইল কোর্ড বসিয়ে স্বাক্ষী ও প্রমাণের ভিত্তিতে শিক্ষক
শর্মাকে ১মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। বাংলাদেশ প্রতিক্ষণের
হস্তক্ষেপে এবং অভিভাবক ও ছাত্রীদের সাহসী ভূমিকার কারণে অপরাধী শর্মা
তার পাপের ফল পেল।
উপস্থিত অভিভাবকগণ শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ
মোবাশশেরুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ কে.এম নজরুল ইসলাম,
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিছ আলী, বাংলাদেশ
প্রতিক্ষণের সম্পাদক আলতাফ খাঁনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ধন্যবাদ
জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কবিতা রানী দেব, বাংলাদেশ
প্রতিক্ষণের বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম জুয়েল, চ্যানেল ৭১ এর
মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি আহমদ ফারুক মিল্লাদ,সাংবাদিক ও লেখক
কাজল,সাংবাদিক কাউসার ইকবাল সহ অন্যান্য সংবাদকর্মীরা।