অনলাইন ডেস্কঃ খুলনা থেকে কলকাতা পর্যন্ত চলাচলকারী মৈত্রী ট্রেন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আগামীকাল। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপমহাপরিচালক (অপারেশন) মো. হাবিবুর রহমান বাসসকে বলেন, ‘খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর খুলনা-কলকাতা থেকে যাত্রীবাহী লাল-সবুজ ট্রেনের চলাচল আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেন।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস নামে এই ট্রেন সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক ট্রান্স-এশিয়ান রেলরুটে অন্তর্ভুক্ত হবে বাংলাদেশ। এতে রেলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুবিধাসহ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বৃদ্ধি পাবে।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পাশাপাশি কাল ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী ট্রেনের ওয়ানস্টপ সার্ভিসও উদ্বোধন করা হবে। ফলে ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হবে যাত্রা স্টেশনেই।’
এ ক্ষেত্রে যাঁরা কলকাতা যাবেন, তাঁদের ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এবং কলকাতা থেকে যাঁরা বাংলাদেশে আসবেন তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কলকাতা স্টেশনেই সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘এই সার্ভিস চালু হলে ঢাকা ও কলকাতার দুই প্রান্তে শুরুতেই ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ সেরে নেওয়া হবে। ফলে মৈত্রী এক্সপ্রেসের মধ্যপথে আর কোথাও বিরতির প্রয়োজন হবে না। ট্রেনটি ননস্টপ চলাচল করবে।’
এখন এই ট্রেনের যাত্রীদের বাংলাদেশের দর্শনা ও ভারতের গেদে স্টেশনে ইমিগ্রেশন কাজ সারতে হয়। এ সময় যাত্রীদের সকল মালামাল নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আবার মালামাল নিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়। ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে মাঝপথে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় চলে যায়। বিষয়টি অনেক সময় যাত্রীদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রাপথে দুই দেশের ইমিগ্রেশনের ঝামেলা দূর করতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ অন্যান্য চেক আপ সেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রেনের ভেতরে খাদ্য-পানীয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকায় মাঝপথে কোথাও থামানোর প্রয়োজন নেই। ট্রেনটি কলকাতা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব ভ্রমণ করতে হয়। এখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াতে যেখানে প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে ভ্রমণ সময় ৯ থেকে ১০ ঘণ্টায় নেমে আসবে।’ তিনি আরো জানান, মৈত্রী ট্রেনের সেবার মান আরো বাড়াতে এবং এই ট্রেনে ভ্রমণ সহজ, আরামদায়ক ও গতি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার সম্প্রসারণে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল মৈত্রী ট্রেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ছাড়া ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে এখন সপ্তাহে ছয়দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এটি এখন সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভাড়া ভ্রমণ করসহ এক হাজার ৬৩৩ টাকা। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের ৫০ শতাংশ কম ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারে।
রেল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম বাসসকে জানান, অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া ও আরামদায়ক ভ্রমণ হওয়ায় এখন ঢাকা-কলকাতা ভ্রমণের ক্ষেত্রে মৈত্রী এক্সপ্রেস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে এখন আর ট্রেনের আসন তেমন খালি থাকে না। প্রতিদিন উভয় দিক থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক যাত্রী এই ট্রেনে যাতায়াত করে।