বাংলার প্রতিদিন ডটকম,
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেছেন, যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য পূর্বশর্ত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিচার বিভাগের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের ওপর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে। একটি শক্তিশালী ও সহযোগিতামূলক বার (আইনজীবী) নিঃসন্দেহে বেঞ্চের (বিচারক) সবচেয়ে কার্যকর বন্ধু। বারই একজন বিচারককে প্রশিক্ষিত করেন, যিনি পরবর্তীতে ন্যায় বিচার মন্দিরের একজন পুরোহিত হয়ে উঠেন।
শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে নবীন আইনজীবীদের মাঝে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতিন খসরু এমপি, বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ, ম, রেজাউল করিম প্রমুখ।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার রক্ষায় সমুন্নত রাখতে আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারাই আইন ও বিচারকে জনমানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেন। তাদের মুখ্য কাজ হচ্ছে সকলের জন্য মানসম্পন্ন সুবিচার নিশ্চিত করতে সহায়তা করা।
বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের সমাজের বিচার বিভাগের একটি মর্যাদা আছে এবং ন্যায় বিচারের জন্য জনগণ আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করে। এখনও সব শ্রেণির নাগরিক তাদের বিবাদ নিষ্পত্তি, তাদের অধিকারের সুরক্ষায় যে কোন কর্তৃপক্ষ, এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার জন্যও আদালতের শরণাপন্ন হন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে ৩০ লক্ষাধিক মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের তুলনায় কর্মশক্তি খুবই অপ্রতুল। বিচারাধীন মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা অনেক কম।
তিনি বলেন, প্রবীণ আইনজীবীরা নবীণ আইনজীবীদের শিক্ষাগুরু তুল্য। প্রবীণ আইনজীবীদেরকে নবীণদের আইনের ব্যবহারিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি প্রফেশনাল কনডাক্ট অ্যান্ড এটিকেট সম্পর্কে শিক্ষাদান করতে হবে।
তিনি বলেন, আইনজীবীরা হচ্ছেন সমাজ গড়ার কারিগর, আর বিচারকরা হচ্ছেন ন্যায় বিচারের মূর্ত প্রতীক। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের মাধ্যমে বিচারক এবং আইনজীবীদের সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে। আইনজীবী ও বিচারকদের সম্পর্ক একটি পাখির দুটি পালকের মতো, একটি গাড়ির দুটি চাকার মতো, ডান হাত বাম হাতের মতো, ডান চোখ বাম চোখের মতো, বাম পা ডান পায়ের মতো। এ কারণে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য দুই পক্ষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে বিচার প্রশাসনে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং মামলা নিষ্পত্তির চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জনগণের প্রত্যাশা ও সাংবিধানিক অধিকার পূরণে আইনজীবী সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ, আইনজীবীরা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় চালিকা শক্তি হিসেবে অবদান রাখেন।
তিনি বলেন, আইন পেশায় দক্ষতা অর্জনে নিয়মিত পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়া পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জন করা দূরহ ব্যাপার। তাই বার কাউন্সিলকে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আইনজীবীদের বৃহত্তর স্বার্থে আইন পেশার মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে কেবল মেধা ও যোগ্যার ভিত্তিতে বার কাউন্সিল সনদ প্রদান করা উচিত। মেধা ও যোগ্যতার ক্ষেত্রে কোন ধরনের শৈথিল্য কাম্য নয়।