বাংলার প্রতিদিন ডটকম,
বাংলাদেশে আসা ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে রাখাইন রাজ্যের মংডুতে পুর্নবাসন করার জন্য মিয়ানমারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
মঙ্গলবার মিয়ানমারের নেপিদো শহরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের (এমপিএফ) চতুর্থ শীর্ষ পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। সম্মেলনে মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আকাশসীমা লঙ্ঘনসহ ৯টি বিষয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়।
এতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের চিফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো সুয়ি উইনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল অংশ নেয় বলে বুধবার মিয়ানমারের দৈনিক ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
আবুল হোসেন বলেন, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখন বাংলাদেশের জন্য বোঝা। মিয়ানমার সরকার তাদের দেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে, তাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করা উচিত।
মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের চিফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো সুয়ি উইন বলেন, বাংলাদেশে কত সংখ্যক রোহিঙ্গা গেছে তা খতিয়ে দেখে তাদের সঠিক তালিক তৈরি করতে হবে। খবর ইরাবতীর
গত ২৪ আগস্ট রাতে একযোগে মিয়ানমারের ৩০টি পুলিশ পোস্টে সন্ত্রাসী হামলার পর রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের দমন-পীড়নের মুখে ইতোমধ্যে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের ভূমিতে ফিরতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী মাইন পুঁতেছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে। এরমধ্যে মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে কয়েকজন বাংলাদেশে চিকিৎসাও নিয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশে অভিমুখে রোহিঙ্গা ঢলের মধ্যে কয়েক দফায় আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ঢুকে পড়ে, যার প্রতিবার জানিয়েছে ঢাকা।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির এক মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলও মিয়ানমার সফর করেছে। আলোচনায় রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এখনও তার কোনো অগ্রগতি নেই।
মঙ্গলবারের সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে– সীমান্ত লঙ্ঘন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ, সীমান্ত এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো, ভূমি ও আকাশসীমা লঙ্ঘন, সীমান্তে সামরিক বাহিনীর চলাচল, মাইন স্থাপন, পুঁতে রাখা মাইন ও বিস্ফোরক অপসারণ, সন্ত্রাসী ও নাগরিকদের আটক ও অপহরণ। আন্তঃসীমান্ত অপরাধ যেমন- মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, চোরাচালান দ্রব্য, মানব পাচার, অবৈধভাবে মাছ আহরণ ও বাংলাদেশি জেলেদের ওপর গুলিবর্ষণ। সীমান্ত নিরাপত্তায় পারস্পরিক সহযোগিতা যেমন- নিয়মিত পতাকা বৈঠক, স্থানীয় অধিনায়ক পর্যায়ের বৈঠক, নাফ নদীসহ সীমান্তে সমন্বিত যৌথ টহল ও সীমান্তে যৌথ নজরদারি। পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপ যেমন- ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ ও সফর বিনিময়, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি বিনিময়, উভয় বাহিনীর পরিবার কল্যাণ সমিতির সদস্যদের ভ্রমনসহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এবং চিফ অব মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। সম্মেলন শেষে আগামী ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল দেশে ফিরবে।