শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
শিল্পাঞ্চলে সমৃদ্ধ গাজীপুরের শ্রীপুর ও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ বিভাগের
হাজার হাজার লোকজন ও কয়েকশ শিল্পকারখানার যানবাহন প্রতিদিন
উত্তরবঙ্গের সাথে যোগাযোগে মাওনা-কালিয়াকৈর সড়ক ব্যবহার করেন।
এ সড়কটি কালিয়াকৈর হতে যমুনা বহুমুখী সেতুর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ,
সাভার-আশুলিয়া হয়ে ও ধামরাইয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে আসলেও
দীর্ঘ এক যুগ যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন সড়কটি চলাচলের
অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এতে ওই সড়কের চলাচলরত বাস-ট্রাক গুলোকে প্রায়
৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে এবং গাড়িগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল
মহাসড়ক ধরে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত জয়দেবপুর ও চন্দ্রা মোড়ের
যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে জনদুর্ভোগে পড়ছেন কয়েক লাখ
মানুষ।
গাজীপুর সড়ক বিভাগের তথ্যমতে মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কের মাওনা
চৌরাস্তা থেকে সালদহ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার শ্রীপুর অংশের অপরদিকে
সালদহ থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ২২কিলোমিটার কালিয়াকৈর অংশের
সড়কটি গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন। সড়কটির প্রস্থ ১২
ফুট থাকলেও ভেঙ্গে চুরে ৫ থেকে ৬ফুটে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৮সালে এ
সড়কটি পাঁকা করা হয়। এরপর রাস্তায় দু’একবার সংস্কার করা হলেও এক
যুগ অতিক্রম হয়ে গেছে তাতে কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। বরাদ্দ না
থাকার অজুহাতে সড়কের সংস্কার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন
কর্তৃপক্ষ। সড়কটির শ্রীপুর অংশের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় আর
কালিয়াকৈর অংশের মেদিয়া শোলাই, নামা শোলাই, পাইকপাড়া,
মজিদচালা বাজার, জাঁঠালিয়া বিট অফিস সংলগ্ন ও ফুলবাড়িয়া
বাজার এলাকায় সড়কটি প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। এ
সড়কটির মাঝে মাঝে প্রস্থ এতই কম যে, দুটি পরিবহণ পাশ কাটাতে
গেলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
কালিয়াকৈর উপজেলা ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ
বাছেদ জানান, তিনি তাঁর বাড়ি মজিদের চালা বাজার হতে
কালিয়াকৈর উপজেলা ভূমি অফিসে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এ
সড়কের দূরাবস্থার জন্য যানবাহনে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। মাঝে
মাঝে যানবাহনের ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয় তাঁকে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভায় সার্ভেয়ার পদে চাকুরী করতেন
মোস্তফা কামাল, তাঁর বাড়ি শ্রীপুরের মাওনা এলাকায়। তিনি বলেন,
সংস্কারের অভাবে এ সড়কের অবস্থা এতই শোচনীয় যে, এখানে রাস্তা
খারাপের অজুহাতে নিয়মিত যানবাহন চলে না, সিরিয়াল নিয়ে ঘন্টার
পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। সময় বাঁচাতে গাজীপুর হয়ে চল্লিশ
কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হতো তাঁকে।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, তাঁর
এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজনের কালিয়াকৈর উপজেলা সদরের
সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সড়ক। কিন্তু সংস্কারের অভাবে এ
সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহন চলে না। ফলে বিভিন্ন সি এন জি
অটোরিক্সায় এখন স্থানীয়দের একমাত্র ভরসা। আর রাস্তা খারাপের অঁজুহাতে
তাঁরা হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
মাওনা থেকে কালিয়াকৈর গণপরিবহনের চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, এ
সড়কের অবস্থা এতই শোচনীয় যে, রাস্তা খারাপ থাকায় দিনে ওই সড়কে
কেউ বাস চালাতে চায় না। তারপরও এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করে দিনে
বর্তমানে এ সড়কে তিনটি গণপরিবহন চলাচল করে।
মাওনা চৌরাস্তার বাজার রোডের ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান,
অনেকদিন হয়ে গেল এ সড়কের মাওনা চৌরাস্তা হতে বাজার পর্যন্ত
৩কিলোমিটার অংশ এতই খারাপ যে, এখানে যানবাহন তো দূরের কথা
হেঁটেও চলা যায় না।
শ্রীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইজ্জত আলী ফকির বলেন, এ
সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের থাকার পরও জনদূর্ভোগের কথা
বিবেচনা করে পৌরসভার জরুরী তহবিল হতে পৌর এলাকার মধ্যে তিন
কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু শিল্পকারকানার
যানবাহনের চাপে তাও ভেঙ্গে গেছে।
নোমান গ্রুপের কারখানার কাভার্ড ভ্যান চালক খোরশেদ আলী বলেন,
উত্তরবঙ্গ হতে গাড়ী নিয়ে ঢাকায় ঢুকতে অনেক সময় যানজটে আটকে
থাকতে হয়। সময় বাঁচাতে আমরা বিকল্প এ সড়ক ব্যবহার করছিলাম কিন্তু
সংস্কারের অভাবে খানা খন্দের সৃষ্টি হওয়ায় এখন এ সড়ক ব্যবহার করা যায়
না।
উত্তরবঙ্গের বিএম পরিবহনের চালক হোসেন আলী বলেন, শ্রীপুরের
আশাপাশের এলাকা হতে প্রতিদিন যাত্রীদের নিয়ে কয়েকটি বাস
উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আগে এ সড়ক
ব্যবহার করে যমুনা বহুমুখী সেতুর রাস্তা ধরলেও সড়কটি খারাপ থাকায়
এখন আর এ সড়কে চলা দায়। ফলে গাজীপুর বাইপাস হয়ে
৩০কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে যানজটে আটকে থাকার
পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচ হয়।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন বলেন,
মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল বাস-ট্রাক
জয়দেবপুর হয়ে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে তারা এসড়কটি ব্যবহার করলে
জয়দেবপুর ও চন্দ্রা মোড়ের যানজট কমে যাওয়ার পাশাপাশি জ্বালানির
সাশ্রয় হবে।
এব্যাপারে গাজীপুর সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খায়রুল
বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম বলেন, সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনদুর্ভোগ
বিবেচনায় ইতিমধ্যে, সড়কটির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত
করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কের কাজ শুরু হবে ।