শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি ॥
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার চার হাজার শিক্ষার্থী ও হাজার হাজার
মানুষ রেলওয়ের দুটি লেভেল ক্রসিং দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হচ্ছে। এর
একটি হল কাওরাইদ বাজার লেভেলক্রসিং ও আরেকটি ভিটি পাড়া
লেভেলক্রসিং।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের লেভেল ক্রসিং দুটির একটিতেও সিগনাল
বার ও গেইটম্যান নেই। কাওরাইদ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে এক
ছাত্রী নিহত হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে
যাচ্ছে মালবাহী ট্রাক, ট্রলিসহ নানা ধরণের যানবাহন। ঘটছে
ছোটখাটো দুর্ঘটনা। এসব এড়াতে মাঝে মধ্যে আন্ত:নগর ট্রেন
সিগনাল দিয়ে থামিয়ে সরানো হচ্ছে আটকে যাওয়া যানবাহন।
ভিটিপাড়া গ্রামের ¯œাতক সম্মান শ্রেণীর শিক্ষার্থী স্থানীয়
বাসিন্দা কাঞ্চন বলেন, ভিটি পাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে সিগনাল বার বা
গেইটম্যানও নেই। বেশ কয়েকবার বালিভর্তি ট্রলি পারাপার হতে গিয়ে
ট্রেনের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সর্বদা আতঙ্কের মধ্যে
লেভেল ক্রসিং পার হতে হয়।
ভিটিপাড়া বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, ভিটিপাড়া লেভেল
ক্রসিংয়ে একটা গেইটম্যান ও সিগনাল বারের প্রয়োজনীয়তা আমাদের
ছাড়া কেউ উপলব্ধি করে না। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে আমাদেরকে
লেভেল ক্রসিং দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এলাকার বাসিন্দা হিসেবে
আমরা নিরুপায়।
কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান নাজমুল
বলেন, বেশ কিছুদিন আগে তাঁর বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লেভেল ক্রসিং
পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে। এবিদ্যালয়ের পাশে
আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই
হাজার এক’শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কোমলমতি এসব শিশু
শিক্ষার্থীরা কাওরাইদ রেলস্টেশনের পাশে লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন
নিশ্চিত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়।
স্থানীয় অভিভাবক ও কাওরাইদ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি
রাজু আহমেদ বলেন, প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে কাওরাইদ
বাজারের রেলস্টেশন সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ে। গত দু’সপ্তাহ আগে লেভেল
ক্রসিংয়ে একটি বালি ভর্তি ট্রাক আটকে পড়েছিল। পরে আন্ত:নগর
তিস্তা এক্সপ্রেস সিগনাল দিয়ে থামিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়।
কাওরাইদ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ক্রসিংয়ে
একবার ট্রেনে কাটা পড়ে ছাত্রী নিহতের জেরে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী
রেলস্টেশনে হামলা চালিয়েছিল। সে সময় সিগনাল সিস্টেম ভাংচুর করা
হয়েছিল। কাওরাইদ বাজারের লেভেল ক্রসিংয়ে সিগনাল বার ও গেইটম্যানের
প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
শ্রীপুর রেলস্টেশনের স্টেশনের স্টেশন মাস্টার হারুন অর রশীদ জানান,
প্রতিদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ১২টি ট্রেন ২৪ বার যাতায়াত করে
থাকে।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন,
এখানকার সকল মানুষ লেভেল ক্রসিংয়ের জন্য দিনের পর দিন ঝুঁকি নিয়ে
যাতায়াত ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। লেভেল ক্রসিংয়ের আশপাশে একটি
কলেজ, একটি মাধ্যমিক, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা
রয়েছে। লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন দূর-দূরান্তের হাজার হাজার মানুষ
যাতায়াত করে। এ ছাড়াও এখানে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন
পরিষদ ও গাজীপুর জেলার বৃহত্তম একটি বাজার রয়েছে।