স্বাস্থ্য ঃ-
শীত এলেই জ্বর, সর্দি এবং কাশি এই তিনটি রোগ যেন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বছরের এই সময় যদি কয়েকটি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যায়, তাহলে শরীর ভিতর থেকে এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে জ্বর, সর্দি এবং কাশি, এই ত্রয়ী আপনার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী সেই খাবারগুলি…
১. ভিটামিন ডি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি দূষণ এবং নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও এই ভিটামিনটি সাহায্য করে। তাই শীতকালে শরীরে যাতে কোনও ভাবেই এই ভিটামিনটির ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কাজটি করবেন কীভাবে? খুব সহজ! প্রতিদিন সকালে কিছুটা সময় গায়ে রোদ লাগান। তাহলেই কেল্লাফতে! কারণ সূর্যালোক যখন আমাদের ত্বকের উপর আছড়ে পড়ে, তখন বিপুল পরিমাণে ভিটামিন ডি তৈরি হয় দেহের ভেতরে। এছাড়াও মাশরুম, মাছ এবং ডিম খেলেও শরীরে এই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দূর হয়।
২. ভিটামিন সি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে ভিটামিন সি-এর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সেই কারণেই তো সারা বছর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। আর শীতকালে যেহেতু এমনিতেই নানাবিধ ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তাই এই সময় বেশি করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- পাতি লেবু, কমলা লেবু, কর্নফ্লাওয়ার, আপেল এবং পেয়ারা খেতে হবে।
৩. প্রোটিন
মানব শরীরকে সক্রিয় রাখতে পানির পরেই যার নাম আসে সে হল প্রোটিন। এই উপাদানটি ছাড়া শরীরের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই প্রোটিনের ঘাটতি যেন কোনও সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, বিশেষত শীতকালে। কারণ এই সময় এমনিতেই নানা কারণে শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার উপর যদি ঠিক মতো প্রোটিনের যোগান না হয়, তাহলে আরও বিপদ! তাই শীতকালে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এবং পনির বেশি করে খেতে ভুলবেন না যেন!
৪. জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম
শরীর তখনই সফলভাবে সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে, যখন জিঙ্ক এবং সেলেনিয়ামের ঘাটতি দূর হবে। কারণ এই দুটি উপাদান রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে মাশরুম, পালং শাক, মুরগির মাংস এবং বাঁধাকপি থাকা মাস্ট!
৫. ভিটামিন এ
শরীরের বহিরাংশে যে কোষেরা রয়েছে, তারা হল দেহের প্রথম ডিফেন্স সিস্টেম। তাই ছোট-বড় নানা রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আর এই কাজটি করা তখনই সম্ভব হবে, যখন দেহে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি দূর হবে। আসলে এই বিশেষ ধরনের ভিটামিনটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসদের প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শীতকালে সুস্থ-সবল থাকতে বেশি করে খেতে হবে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- রাঙা আলু, ব্রকলি, গাজর, পালং শাক,মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি।
৬. হলুদ
এই মশলাটির ভেতরে থাকা কার্কিউমিন নামক একটি উপাদান একদিকে যেমন শরীরের ভেতরে হতে থাকা প্রদাহ কমায়, তেমনি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও ব্যাপক শক্তিশালী করে তোলে। প্রসঙ্গত, হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ এবং নানাবিধ ডিটক্সিফাইং এজেন্টও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. রসুন
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে রসুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো এই শীতকালে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া করে রসুন খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
কৃতজ্ঞ/কালের কণ্ঠ