টি.আই সানি,শ্রীপুর (গাজীপুর) সংবাদদাতা:
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তা ও সাবরেজিস্ট্রি
অফিসের সামনে দুই স্থানের ২০০ মিটার এলাকার জলাবদ্ধতায়
প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন যাবৎ এসব
এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না
নেয়ায় জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি মিলছে না জনসাধারণের।
স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রীপুর
পৌর এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান শ্রীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও
মাওনা চৌরাস্তা এলাকা। প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে এ দুটি
এলাকায় হাজার হাজার লোকজন চলাচল করে। দীর্ঘদিন যাবৎ
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে সরকারি রাজস্ব
আহরণের অন্যতম সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মূল ফটক দিয়ে সাধারণ
লোকজনের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বর্ষাকাল শেষ হয়ে
শীতকাল এসে পড়ার পরও জলাবদ্ধতার কবল হতে মুক্ত হতে না পেরে বিকল্প
পথ ঘুরে অফিসের কাজ করতে হয়।
এদিকে শ্রীপুরের প্রাণ কেন্দ্র মাওনা চৌরাস্তা উপজেলার মধ্যে
ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রে থাকলেও বিভিন্ন হোটেল
রেস্তোরাঁর ব্যবহৃত পানি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর ছেড়ে
দেয়ার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতেও মূল সড়ক ধরে চলাচল
করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ দুটি স্থানের জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতিসহ দিন
দিন দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।
মাওনা চৌরাস্তার বণিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট
আশরাফুল ইসলাম রতন জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় বিপণি
বিতানের অবস্থান মাওনা চৌরাস্তায়। এখানে প্রতিদিন কোটি
কোটি টাকার অর্থ লেনদেন হয়। ২৪টি ব্যাংকের অবস্থানও রয়েছে।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজন চলাচল
করেন। কিন্তু, জলাবদ্ধতার কারণে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে
সাধারণ লোকজনকে চলাচল করতে হয়। এতে দিন দিন দুর্ভোগ যেন
বেড়েই চলছে।
মাওনা চৌরাস্তার ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন অভিযোগ করে ভোরের
ডাককে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে বিভিন্ন হোটেল-
রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এদের পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা
না থাকায় রাতের বেলায় ব্যবহৃত পানি মহাসড়কে ছেড়ে দেয় আর
এতেই তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও যেন
কেউ নেই।
কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবু সাইদ
জানান, নানা কারণে প্রতিদিন কয়েকবার মাওনা চৌরাস্তায়
আসতে হয়। বর্তমানে জলাবদ্ধতার কারণে চলাচল করতে গিয়ে জামা-
কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।
শ্রীপুর মিজানুর রহমান খান মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক
মাসুদুজ্জামান জানান, প্রতিদিন মাওনা চৌরাস্তা হয়ে শ্রীপুরে
যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতা যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী।
নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার পরও তা নিরসনের জন্য কারও
যেন কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
মাওনা চৌরাস্তার রাজধানী হোটেলের মালিক দুলাল মিয়া বলেন,
হোটেল রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত অর্ধিকাংশ পানি আমরা ড্রামে করে
নিষ্কাশন করি। কিছু কিছু পানি রাস্তায় চলে যায়। এতে আমরাও
বেশ বিব্রত।
শ্রীপুর রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক নাজমুল ইসলাম জানান,
জলাবদ্ধতার কারণে রেজিস্ট্রি অফিসের মূল ফটক কয়েক বছর ধরে বন্ধ
রয়েছে। অন্যত্র ঘুরে আমাদের অফিসে যেতে হয়। এতে নানা ধরনের
সমস্যা তৈরি হয়।
এব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার সৈয়দ নজরুল ইসলাম
বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে সমাধানের লক্ষ্যে
পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে উদ্যোগ নেয়া হবে।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন
জানান, জলাবদ্ধতার কারণে সাধারণ লোকজনের চলার পথে নানা ধরনের
প্রতিবন্ধকতা বিবেচনা করে হোটেল রেস্তোরাঁর মালিকপক্ষকে
মহাসড়কে পানি না ছাড়ার ব্যাপারে একাধিকবার সতর্ক করা
হয়েছে। কিন্তু, তারা এদিকে কর্ণপাত করেননি।
শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মোল্লা
বলেন, মাওনা চৌরাস্তার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশ্বব্যাংকের
ডিএমডিএফ প্রকল্পের আওতায় মাওনা চৌরাস্তা-মাস্টারবাড়ী খাল
পর্যন্ত একটি ড্রেন নির্মাণের প্রস্থাবনা রয়েছে। এটি করা
সম্ভব হলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে। এছাড়াও শ্রীপুর সাব
রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে জলাবদ্ধতা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে
স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কাজ চলছে।