মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায়
প্রশাসনের নাকের ঢগায় বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় ফাঁকি দিয়ে চলছে নকল
সিগারেটের রমরমা ব্যবসা। পূর্বে ব্যবহৃত ব্যান্ডরুল ও নকল ব্যান্ডরুল
ব্যবহার করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন রকম আইন না মেনে একদল অসাধূ
ব্যবসায়ী হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অনুসন্ধানে জানাযায়, এসব
সিগারেটের উতপত্তি বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে।
স্থানীয় বড় বড় ব্যাবসায়ীদের পরিবেশক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে কোন রকম নিয়ম না
মেনেই বিক্রি হচ্ছে এই সিগারেট। এই নকল সিগারেটের কিছু কিছু ব্যাবসায়ীদের
ইতিমধ্যে সিলেট ও বিয়ানীবাজার এলাকায় ভ্রাম্মমান আদালতে প্রশাসন অভিযান
চালিয়ে লক্ষ টাকার সিগারেট পুরিয়েছেন বলে বিভিন্ন পত্রিকার সুত্রে জানা
যায়। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলার প্রশাসন এখনও নীরব রয়েছেন। মৌলভীবাজার
মার্কেটে যেসব নকল সিগারেট পাওয়া যায় তার মধ্যে সেনরগোল্ড, সেনরগোল্ড
পিওর, সেনরগোল্ড ফ্রেস, স্টারগোল্ড, ডার্লি, সিটি ব্লাক, ভরসা, গোল্ড
স্টার ও অন্যান্য বিদেশী সিগারেট যার কোন ভ্যাট প্রদান করা হয় না। এসব
সিগারেটের প্যাকেটে নকল স্টাম্প ও পুরাতন পূর্বে ব্যবহৃত ব্যান্ডরুল
ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরকারের বিগত বাজেট অনুযায়ী দেশে সর্বনিম্ন সিগারেটের মূল্য হবে প্রতি
শলাকা ৩ টাকা ও প্রতি ১০ শলাকার প্যাকেটের দাম হবে ২৭ টাকা। নিয়মানুযায়ী
বাজারে প্রতি ২০ শলাকা সিগারেটের মূল্য হওয়ার কথা ৫৪ টাকা।
অথচ তাদের বিক্রির মূল্য ৫৬ টাকা। উল্লেখ্য, সিগারেটের বাজার মূল্য প্রতি
২০ শালাকার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা যার প্রতি শলাকার দাম পড়ে ১
টাকা। যা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রন ও রাজস্ব বিভাগের আইন পরিপন্থি। সঠিক
ভাবে মুসক না দেয়ায় ও এনবিআরের ব্যান্ডরুল ব্যবহার না করার জন্যই এসব
কোম্পানী ১ টাকা মূল্যে এই সিগারেট বিক্রি করতে সক্ষম হচ্ছে। যার কারনে
সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। একটি বিশ্বস্থ সুত্র থেকে নেয়া
তথ্যমতে মৌলভীবাজার সদর সহ রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ি ও
বড়লেখায় প্রতিদিন নকল সিগারেট বিক্রি হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ শলাকা। যার
বাজার মূল্য দাড়ায় ১৫-১৮ লক্ষ টাকা। এতে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ৯ লক্ষ
টাকা। যা প্রতিমাসে হিসাবে করলে দাড়ায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। সরকারের এই
বিশাল আকারের ক্ষতির চিত্র দেখার যেন কেউ নেই। এসব সিগারেট নিয়ে সিলেট
শহর ও বিয়ানীবাজারসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন অভিযান
চালালেও মৌলভীবাাজার জেলায় কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা হয় নাই।
সিলেট নগরীর বন্দর বাজারের হাসান মার্কেট এবং কানাইঘাট থানার কানাইঘাট
বাজারে গত ২২ ও ২৩ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক দেশীয় অবৈধ
সিগারেট জব্দ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক ইমনের
নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল সিলেট নগরীর বন্দর
বাজারে একটি ঝটিকা অভিযান চালান। অভিযানে সেলিম স্টোর এবং আসাব স্টোর
থেকে প্রায় ৫০০০ প্যাকেট (১০ কার্টন) নকল ট্যাক্স স্ট্যাম্প ও
ব্যান্ডরোলযুক্ত সেনর গোল্ড ফাস্ট, সেনর গোল্ড পিওর, সিটি ব্লাক এবং সিটি
স্লিম সিগারেট আটক করে। আটককৃত সিগারেটের আনুমানিক মূল্য ছিল প্রায় এক
লক্ষ টাকা। (সুত্র : নিউজ বাংলাদেশ ডট কম, সিলেট ভিউ২৪.কম, ও বিভিন্ন
জাতীয় দৈনিক) এ ছাড়াও আরোও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়
এসব নকল সিগারেট।
খবর নিয়ে জানা যায়, এসব অবৈধ সিগারেট ব্র্যান্ড বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী
অঞ্চলে উৎপাদিত হয়ে থাকে, যা স্থানীয় কিছু পাইকার ও ডিলারের মাধ্যমে
বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। রকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় এসব অবৈধ
সিগারেট ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে তৎপর নয় স্থানীয় প্রশাসন। তাই অনেকটা
উৎফুল্লেই বিক্রি করছেন দোকানদার। দেখা যায় মৌলভীবাজার জেলায় সমপরিমান
মূল্যের সিগারেট বিএটিবির পাইলট, ডারবি আবুল খায়ের টোবাকোর মেরিজ ও ঢাকা
টোবাকো ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সেখ সিগারেট সঠিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজারে ব্যাবসায়ী ও নকল সিগারেটের পরিবেশক ও
বিক্রেতা মেসার্স লিটন এন্টারপ্রাইজ স্বত্তাধীকারী লিটন পালের কাছে এই
নকল সিগারেট সম্পর্কে ও ভ্যাটের কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন
ভাই এত কিছু বুঝিনা কাষ্টমারতো খাচ্ছে। সিগারেটের বৈধতা সর্ম্পকে জানতে
চাইলে তিনি বলেন বৈধ অবৈধ বুঝি না আমার ব্যাবসা হচ্ছে তাই বিক্রি করছি ।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার আবগারী ও ভ্যাট সার্কেলের সহকারী কমিশনার মো. আল
আমিনের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন
তথ্য নেই এবং আমি জানি না। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং যদি তথ্য পাই তাহলে
আমরা আইনানোগ ব্যবস্থা নিব।