টি.আই সানি,শ্রীপুর (গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমীর পেলাইদ এলাকায় উড়িয়াদী খালের উপর
নির্মিত সেতু ভেঙ্গে পরায় দুর্ভোগে পড়েছে শ্রীপুর,কাপাসিয়া
ও গফরগাঁও উপজেলার হাজারো মানুষ।
সংস্কারের অভাবে বরমীর সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী কয়েকটি সড়ক
দীর্ঘদিন ধরে যান চলাচলে অযোগ্য হয়ে থাকায় বিকল্প সড়ক
হিসেবে শ্রীপুর থেকে গোসিঙ্গা-পেলাইদ হয়ে বরমীসহ আশপাশের
কয়েকটি উপজেলার লোক যাতায়াত করত। গত ৪ নভেম্বর এই সড়কের
উপর নির্মিত ৪০ফুট সেতুটি ভেঙ্গে যাত্রীদের দুর্ভোগ যেন
বেড়েই চলছে।
রাজধানী ঢাকার সাথে কিশোরগঞ্জ সহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন
এলাকার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষে বতর্মান সরকারের আমলে
শ্রীপুরের বরামা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত
আলী সেতু নির্মান করা হয়। বরমীর প্রধান কয়েকটি সড়ক
সংস্কারের অভাবে যানচলাচলের অনুপযুক্ত থাকায় কয়েকটি উপজেলার
মানুষ শ্রীপুর-গোষিঙ্গা- পেলাইদ সড়ক ব্যবহার করে ঢাকা-
ময়মনসিংহ মহাসড়কে সংযুক্ত হত। গত দেড় মাস আগে অতিরিক্ত
যানবাহনের চাপে এই সড়কের উড়িয়াদি সেতুটি ভেঙ্গে পরায় এখন
জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গার্মেন্টসের
শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আলী আজমত জানান,
দীর্ঘদিন সংষ্কারের অভাবে শ্রীপুর-বরমী সড়কটি কয়েক বছর বন্ধ
রয়েছে। ফলে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ
বিকল্প বরমী-পেলাইদ- গোসিঙ্গা-শ্রীপুর সড়ক ব্যবহার করে আসছেন।
ফলে ওই সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েগিয়েছিল। অপরদিকে
স্থানীয়দের বাঁধা সত্ত্বেও এ সড়ক দিয়ে কয়েকমাস যাবত ধারণ
ক্ষমতার অতিরিক্ত মাল বহনকারী কয়েক’শ বালু বহনকারী ড্রাম্প ট্রাক
দিন রাত চলাচল করে আসছে। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে উড়িয়াদী
খালের উপর নির্মিত ব্রিজটি ভেঙ্গে পরে।
বরামা গ্রামের ব্যবসায়ী আল-আমীন বলেন, বরমী-শ্রীপুর সড়ক বন্ধ
হয়ে যাওয়ায় প্রায় দুই মাস যাবৎ বিকল্প সড়ক হিসেবে এ
সড়কদিয়ে ব্যবসার মালামাল আনা নেয়ার কাজ করতাম। এখন এসড়কের
ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ায় ত্রিশ কিলোমিটর ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী আজহারুল
ইসলাম বলেন, বরমী-শ্রীপুর সড়ক বন্ধ হওয়ার পর আমরা ১০কিলোমিটার
ঘুরে উপজেলা সদরের গিয়ে কলেজ করতাম। এখন এ ব্রিজটি ভেঙ্গে
কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কলেজে যাওয়ায়
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভাংনাহাটি গ্রামের হ্যামস কারখানার শ্রমিক নাজমা আকতার
বলেন, পাশ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী থেকে
নৌকাযোগে এসে বরমা ঘাট থেকে অফিসের পরিবহনে যাতায়াত
করতাম। এখন ব্রিজটি ভেঙ্গে পরায় আমাদের পাঁচ কিলেমিটার পথ
হেটে আসতে হয়।
বরমী বাজারের ব্যবসায়ী গণেশ ভান্ডারের মালিক রিপন সাহা জানান,
বরমী বাজারের কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বরমীর অন্যান্য
সড়ক যানচলাচলের অনুপযুক্ত থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে
মালামাল পরিবহনের সর্বশেষ ব্যবস্থা ছিল গোষিঙ্গা-পেলাইদ- বরমী
সড়কটি।কিন্তু তা ভেঙ্গে পরায় এখন ৩০ কিলোমিটার ঘুরে চলতে
হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ ও অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
বরমী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক
হোসেন জানান,পেলাইদ থেকে চার কিলোমিটার দুরে বিদ্যালয়ে
ইজিবাইকের মাধ্যমে যাতায়াত করতাম। ব্রিজটি ভেঙ্গে পরায়,এখন
আর গাড়ি চলে না। অনেক কষ্টে হেটে চলাচল করতে হয়।
পেলাইদ গ্রামের ইজিবাইক চালক শাহদাৎ হোসেন জানান, এ
সড়কে ইজিবাইক চালিয়ে দৈনিক একহাজার টাকা আয় করতাম।
কিন্তু এই সেতুটির কারনে এখন আর এ সড়কে যাত্রী পাওয়া যায়না।
বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আর গাড়ির জমার টাকাও উঠে না।
বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার বলেন,
জনদুর্ভোগ বিবেচনায় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে আপাতত
লোকজনের পায়ে হেটে চলাচলের উড়িয়াদী খালের উপর বাঁশ দিয়ে
সাঁকো তৈরী করে দেয়া হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন বলেন, অতিরিক্ত
চাপে পুরাতন এ ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় জনদূর্ভোগ লাগবে খুব
দ্রুততম সময়ে ব্রিজ নির্মানের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ
হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসেই দরপত্র আহবান করা হবে।