বাংলার প্রতিদিনঃ-
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়েনি, বরং কমেছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ কেন কমছে, তার কারণ অনুসন্ধান করছে সরকার। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
‘প্রবাসী দিবস’ উপলক্ষে স্কলারস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়নের কারণেও রেমিট্যান্স কমতে পারে। এক সময় প্রবাসী কর্মীরা আয়ের বড় অংশ দেশে পাঠাতেন। অনেকেই কর্মস্থল বিদেশে স্থায়ী হচ্ছেন।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। রেকর্ডসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও কয়েক বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। ২০১৬ সালে প্রবাসী আয় কমেছে। ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স আসে ১৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছর তা কমে হয় ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি বছরও। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
ধারণা করা হচ্ছে, অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর কারণে রেমিট্যান্স কমেছে। বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাতে দুই দফা কর পরিশোধ করতে হয়। অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে ব্যয় অনেক কম। বিশেষত, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অবৈধভাবে টাকা আসে।
এদিকে রেমিট্যান্স করমুক্ত করতে প্রবাসীরা দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন।শনিবার অনুষ্ঠানে একই দাবি ওঠে। আবুল মাল আবদুল মুহিত এ দাবির জবাবে কোনো কথা বলেননি। মন্ত্রী গুরুত্ব দেন অনলাইন ও দুর্নীতিমুক্ত লেনদেনে।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক-টুদক করেও খুব একটা ফল হয়নি। আইসিটির উন্নয়নে দুর্নীতি কমছে।’ মন্ত্রী একটি কলেজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সিলেটে একটি কলেজের আয়ের বড় উৎস ভর্তির সময়ে টাকা। কিন্তু টাকা বড় ভাইয়েরা নিয়ে যাচ্ছিল। ছাত্ররা ১০০ দিলে কলেজ ২০ টাকা পেত। ৮০ টাকা বড় ভাইয়েরা নিতে যেত। অনলাইনে লেনদেন চালুর পর বড় ভাইয়েরা আর নিতে পারে না। ছয় মাসে কলেজের আয় আট লাখ থেকে ৮০ লাখ হয়ে গেছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্স কমছে। এর কারণ হতে পারে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসে না। দেশে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
প্রবাসীদের সঙ্গে বৈষম্যের অভিযোগ করেন স্কলারস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা ড. নূরুন্নবী। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের তিনটি ব্যাংক দিয়েছেন। কিন্তু প্রবাসীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। রাঘববোয়ালরা মনে করে, প্রবাসীদের ধমক দিলেই চলে যাবে।’ প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুরক্ষা দাবি করেন ড. নূরুন্নবী। তিনি বলেন, প্রবাসীরা বাড়তি সুযোগ চান না। সমান সুযোগ ও সম্মান চান। তা না পেলে তারা দেশে বিনিয়োগ করতে ভরসা পাবেন না।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ব্রিটেন-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এনাম আলী। সভাপতিত্ব করেন স্কলারস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. এ কে এম মোমেন। স্কলারস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এম এ চৌধুরী রেজা জানান, আগামী বছর বাংলাদেশে তৃতীয় প্রবাসী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ৯টি ক্যাটাগরিতে ১৭ জন প্রবাসী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সম্মাননা দেওয়া হবে।