অনলাইন ডেস্কঃ-
নব্য জেএমবির দক্ষিণাঞ্চল প্রধান আবু সাঈদ ওরফে শ্যামলকে বগুড়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা যৌথ অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাত ১টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর হাট এলাকা থেকে অস্ত্র, গুলিসহ তাকে গ্রেফতার করে। আবু সাঈদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বোমা বিস্ম্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত। তাকে ধরিয়ে দিতে ভারত সরকার ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নন্দীগ্রামের ওমরপুরহাটের রাস্তার ওপর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৮ রাউন্ড গুলি, একটি বার্মিজ চাকু এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতার আবু সাঈদ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। ২০১৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় এলাকায় বোমা বিস্ম্ফোরণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ছিল সে। তাকে ধরিয়ে দিতে ভারতীয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) পক্ষ থেকে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
আসাদুজ্জামান জানান, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চরচাঁদপুর গ্রামের শহিদুল্লা শেখের ছেলে আবু সাঈদ ২০০২ সালে জেএমবিতে যোগ দেন। একই বছর সে রাজশাহীর বাগমারার হামিরকুৎসা গ্রামে বাংলাভাই ও শায়খ আবদুর রহমানের সঙ্গে সর্বহারা নিধনে অংশ নেন। ২০০৫ সালে সংগঠনের নওগাঁ জেলার দায়িত্ব পান। একই বছরের ১৭ আগস্ট সারাদেশে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার অংশ হিসেবে আবু সাঈদ নওগাঁয় ৪টি বোমা বিস্ম্ফোরণ ঘটান। ওই মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ২০০৭ সালে আবু সাঈদ ভারতে পালিয়ে যান। ওই সময় সে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জেএমবি সদস্য ইয়াদুলের মেয়ে খাদিজাকে বিয়ে করেন। ২০১০ সালে ভারতের নদীয়া জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১২ সালে বীরভূম ও বর্ধমানের দায়িত্ব পান। জেএমবি নেতা আবু সাঈদের নেতৃত্বেই ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ম্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে ভারতের একটি আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়। এরপর ২০১৫ সালে আবারও পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন আবু সাঈদ।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে আসার পর পরই আবু সাঈদ নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। এ বছরের প্রথম দিকে ওই সংগঠনের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট শূরা কমিটির সদস্য এবং দক্ষিণাঞ্চলের প্রধানের দায়িত্ব পান। জঙ্গি নেতা আবু সাঈদের একাধিক সাংগঠনিক নাম রয়েছে। ভারতে শ্যামল নামে পরিচিত ছিলেন আবু সাঈদ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বগুড়ায় জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম আসামি আবু সাঈদের। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী অপারেশনে অংশ নিতে রাজশাহী থেকে বগুড়া আসছিলেন।’
পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবু সাঈদকে আদালতে তুলে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।