বাংলার প্রতিদিন অনলাইন ডেস্কঃ
আগামীর নির্বাচনে নৌকার পক্ষে জনগণের ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা বাংলাদেশকে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আজ রোববার বিকেলে ঈদগাহ্ মাঠে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে- উন্নত, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা মুক্ত করে গড়ে তুলতে দেশ চালাচ্ছি। আর সেটা একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে। কারণ, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। বিজয়ী জাতি হিসেবে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ যেভাবে অতীতে নৌকায় ভোটি দিয়েছেন সেইভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, আমি সেটাই চাই। আমরা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’ এ সময় তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে নৌকায় ভোট প্রদানের কথা জানতে চাইলে সকলে সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলে ওঠেন। এজন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী একটি বাংলা প্রবাদের উল্লেখ করে বলেন, ভূতের পা নাকি পেছন দিকে চলে। বিএনপি অদ্ভূত হয়ে ক্ষমতায় আসে এবং ভূতের মতো দেশ চালায় বলেই দেশ পেছন দিকে চলে যায়। তিনি উদাহারণ দেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় পূববর্তী বিএনপি সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পেয়েছিলেন মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। আর ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় তাঁর সরকার বিদ্যুৎ রেখে যায় চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু ২০০৯ সালে যখন তিনি আবার যখন ক্ষমতায় আসেন তখন বিদ্যুতের উৎপাদন তো বাড়েইনি বরং কমে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট করতে সক্ষম হয়েছে। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে কোনো ঘরে অন্ধকার থাকবে না। প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত হবে। যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন পৌঁছতে পারছে না সেসব স্থানে সোলার প্যানেল এবং বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে সরকার বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে জনভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী এ দিন যশোরে ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আগামীকাল সারাদেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও ‘বই উৎসবে’র প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু প্রাইমারিতে এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি পাচ্ছে। যে টাকা সরাসরি তাদের মায়েদের মোবাইল ফোনে পৌঁছে যায়। এছাড়া মাধ্যামিক, উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি পিএইচডি লেভেল পর্যন্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট করে তাঁর সরকার বৃত্তি দিচ্ছে যাতে করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভালভাবে লেখাপড়া করতে পারে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যেকটি মানুষকে উন্নত জীবন দেয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষ যেন সবরকম নাগরিক সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছে তাঁর সরকার।
শেখ হাসিনা এ সময় আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে এবং সিঙ্গাপুরের কোর্টে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মানি লন্ডারিং প্রমাণিত হওয়ায় এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির প্রসঙ্গে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনারা একবার চিন্তা করুন আমাদের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, তখন আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, কোনো দুর্নীতি করি নাই, কোন দুর্নীতি হয় নাই। কিন্তু খালেদা জিয়া কি পেরেছে তার বা তার সন্তানের অর্থ অত্মস্যাৎ বা মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে? পারেনি।’
‘যারা মানি লন্ডারিং করে, যারা এতিমের টাকা মেরে খায়, লুটপাট করে, দুর্নীতি করে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা আবার কোন মুখে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০১৪ সাল এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপির সন্ত্রাস, নির্যাতন, নৈরাজ্য এবং হত্যার একটি সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়েছে, প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৭ জন সদস্যকে হত্যা করেছে, এই যশোরে কীভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করেছে-এর যখনই সুযোগ পায় মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে। সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবে না বলে তারা ৯২ দিন বসে থেকে মানুষ মেরেছে। তাদের আন্দোলন মানেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা। এই যশোরেরই বাসের ড্রাইভার, হেলপার-তাদের হত্যা করেছে, সারা বাংলাদেশের রেলে, লঞ্চে, ট্রাকে আগুন দিয়েছে। এই আগুন দিয়েছে ঐ বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাদের রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এই ধরনের অরাজক রাজনীতি যারা করে তারা কখনো দেশের কল্যাণ করতে পারে না, মঙ্গল করতে পারে না। সরকার প্রধান বলেন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, মানুষ পোড়ানো এবং ধ্বংস করা এটাই বিএনপি’র কাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা রাস্তা বানাই আর তারা রাস্তা কেটে ফেলে। আমরা গাছ লাগাই তারা গাছ কেটে ফেলে- এভাবেই তারা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।’
বাবা, মা, ভাই, ভাইদের স্ত্রী, একমাত্র চাচা এবং স্বজনদের ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাতে হারিয়ে তাঁর আর হারাবার কিছু নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আর হারবার কিছু নেই। কোন চাওয়া পাওয়ার জন্যও রাজনীতি করি না। আমার একটাই লক্ষ্য- এদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, আমার বাবা জীবদ্দশায় জীবনবাজি রেখে ২৩ টি বছর সংগ্রাম করে গেছেন, কারাভোগ করেছেন- সেই দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।’ তিনি এ সময় তাঁর সরকারের শাসনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২২ ভাগে দারিদ্র্যের হারকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সময় এদেশে কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। বাংলাদেশের কোন মানুষ অশিক্ষিত থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে, তারা আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৮ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র করেছি। বিনা পয়সায় আমরা ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমি কমিউনিটি ক্লিনিক করলাম আর বেগম খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিল। কারণ, কমিউনিটি ক্লিনিকে কেউ চিকিৎসা নিলে তারা নাকি নৌকায় ভোট দেবে, সেজন্য। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা পুনরায় এই ক্লিনিক চালু করি।’
হত দরিদ্রদের বিনা পয়সায় খাবার দেয়ার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করা হয়েছে যেখান থেকে বিনা জমানতে ঋণ নিয়ে তারা ব্যবসায়ে লগ্নী করতে পারছে। তাদের চাকরির জন্য আর ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে না বরং নিজেই আরো ১০টি লোককে কাজ দিতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার করে প্রতিটি পরিবার যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। দারিদ্র্য বিমোচন আমরা করে দিচ্ছি।
অনূর্ধ্ব ১৫ নারী ফুটবলে সাফ সোনা জয়সহ দেশের খেলাধূলা এবং সার্বিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ক্রিকেট, ফুটবল সব খেলাই আজকে উন্নত হচ্ছে।