সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ঃ-
টানা ৮ দিনের তীব্র শৈত প্রবাহে কুড়িগ্রাম জেলার জনজীবনে
দুর্ভোগ নেমে এসেছে। কুড়িগ্রামের কৃষি আবহাওয়া
অফিসের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার এ অঞ্চলের
সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩.১ ডিগ্রী
সেলসিয়াস। যা এ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। কনকনে ঠান্ডা ও
উত্তরের হাওয়ায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষজন। সবচেয়ে
দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। গত কয়েক দিনে রাত ও দিনের
তাপমাত্রার তারতম্য না থাকায় কাজে বের হতে পারছে না শ্রমজীবি
মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে সর্বত্রই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত
নিবারনের চেষ্টা করছে নি¤œ আয়ের মানুষজন। তীব্র ঠান্ডায়
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষজন।
তবে সোমবার সকাল ১১টা থেকে সুর্যের দেখা মেলায় একটু
স্বস্তি ফিরে এসেছে শীত কাতর মানুষের মাঝে।
কুড়িগ্রাম শহরের ভ্যান চালক মোকছেদ মিয়া জানান, এমন ঠান্ডা
হাত পর্যন্ত বের করা যায় না। তারপরও গাড়ী নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু
এই ঠান্ডায় কোন ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের সোহরাব
আলী জানান, নদীর পাড়ে বাড়ি। ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়া যায় না।
কাজও চলে না। গরম কাপড়ও নাই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুবই কষ্টে
আছি।
এদিকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত
রোগীর সংখ্যা। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় দুই
শিশুসহ গত ১ তারিখ থেকে কিডনী, স্টক, হার্ডএ্যাটাক ও
জন্মগত ত্রুটিসহ বিভিন্ন রোগে শিশু ও বৃদ্ধসহ ১১ জনের মৃত্যু
হয়েছে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন এসব রোগী শীত
জনিত রোগে মারা যায়নি।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে শিশুর চিকিৎসা নিতে আসা
আমেনা বেগম জানান, ঠান্ডায় তার ছেলের পাতলা পায়খানা বমি
হয়েছে। গ্রামের ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নিয়েও ভালো না হওয়া
হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ
শাহিনুর রহমান সরদার জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ার কারনে সদর
হাসপাতালে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩১ জন শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশু ও বৃদ্ধসহ ২১ জন ভর্তি রয়েছে। এখন
পর্যন্ত সদর হাসপাতালে শীত জনিত রোগে কোন রোগী মারা
যায়নি বলে জানান তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকলেও
যথাসাধ্য চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস
খান জানান, চলমান শৈত্য প্রবাহের ফলে এ অঞ্চলে যে শীতের প্রভাব
দেখা দিয়েছে এতে করে মানুষের যাতে কোন অসুবিধা না হয়
সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের কাছে থেকে আমরা ৫৭
হাজার শীতবস্ত্র পেয়েছি যা অতীতের চেয়ে বেশি। শীত বস্ত্র
যথাযথ ভাবে যাতে বিতরন হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। জেলায়
দুঃস্থ মানুষ যারা আছে তাদের তালিকে করে কম্বল পৌছে দেয়া
হচ্ছে। আমরা আরো কম্বল চেয়েছি। আশা করছি সেটি পেয়ে
যাবো এবং দ্রুত শীতার্ত মানুষের কাছে পৌছাইতে পারবো।