বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক;-
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে যারা মাঠে নামবে অতীতের মতো জনগণই তাদের প্রতিহত করবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য একে এম রহমাতুল্লাহর পক্ষে মো. তাজুল ইসলামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বানচালের জন্য আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে। আগুন দিয়ে ভোট কেন্দ্র পুড়িয়েছে । বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢুকে প্রকৌশলীকে হত্যা করেছে। পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। সাধারণ জনগণ তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ করেছে।
তিনি বলেন, বন্দুকের নলে যে দলের জন্ম, তারা কোনো গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না। গণতন্ত্র চর্চা ও অনুশীলন করে না। তারা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদে মদদদান এবং কালো টাকা সাদা করার অনুশীলন করতে জানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর নামে মসজিদে আগুন দিয়েছে, কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে, গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করেছে। কিন্তু জনগণ তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
সংসদ নেতা আরো বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে। ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৯ বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে। আগামীতে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে উন্নীত হবে বলে তিনি আশা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, আর্থ-সামাজিক ও মানব সম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ সালে জিডিপি ছিল ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স আয় ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে হ্রাস পেয়ে ২২ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভাতার পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি পূর্বক ৫৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যা বাজেটে ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ২৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের অধিকাংশ সূচকের অর্জন বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ। এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশে ১৩ কোটির অধিক মোবাইল সিম এবং ৮ কোটির অধিক ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ সেতু যানবাহন পারাপারের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে। এ সেতু এশিয়ান হাইওয়েতে অবস্থিত হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এতে জাতীয় জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি এবং প্রতিবছর দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আগামী ৩ বছরের মধ্যে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা রূপকল্প ২০৪১ প্রণয়ন করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। রূপকল্প ’৪১ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো বাড়ানো হবে।