স্পোর্টস ডেস্কঃ-
‘ওস্তাদের মার শেষ রাতে?’ হাথুরুসিংহের এমনটা না বলারই কথা। তবে ওস্তাদ যে তার আসল মার শেষ রাতেই দেন সেটা খানিকক্ষণ আগেই টাইগারদের দেখিয়ে দিয়েছেন হাথুরু। অথচ আজ জিতলেই প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি নিজেদের ঘরে তুলতো টাইগাররা। কিন্তু তার আগে যে তাদের কঠিন পরীক্ষাতেই পড়তে হয়েছে লঙ্কান বোলারদের। বিশেষ করে বলতে হবে চামারা ও অভিষিক্ত শিহান মাদুশানকার কথা। এ দুজনই তুলে নিয়েছেন টাইগারদের ৫ উইকেট। কিন্তু সবচেয়ে কিপটে বোলিং করেছিলেন চামারা। ৮ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৭ রান দিয়ে তুলে নেন দুই টাইগারকে।
শনিবার মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল। দুই টাইগার রুবেল ও মুস্তাফিজের মাপা বোলিংয়ে ২২১ রানে গিয়ে থামতে হয় তাদের। জয়ের লক্ষ্যে নেমে লঙ্কানদের বোলিং তোপে পড়তে হয় টাইগারদেরও। শেষ পর্যন্ত ৪১.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান করতে সক্ষম হয় টাইগাররা।শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দলীয় ১১ রানে দুশমান্থ চামিরার বলে আকিলা ধনঞ্জয়ার হাতে ক্যাচ হন তামিম ইকবাল। এরপর নবম ওভারে রান আউটের শিকার হন মোহাম্মদ মিঠুন। ২৭ বল খেলে ১০ রান করেছেন তিনি। এরপর দ্রুতই ইনিংসের দশম ওভারে দুশমান্থ চামারার বলে গুনারত্নের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাব্বির রহমান। এটা ছিল চামারার দ্বিতীয় শিকার।দলীয় ২২ রানে তিন উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল বাংলাদেশ। এই জুটিতে স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দলীয় ৮০ রানে আকিলা ধনঞ্জয়ার বলে উপুল থারাঙ্গার হাতে ক্যাচ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ৪০ বল খেলে তিনি করেছেন ২২ রান। এরপর দলীয় ৯০ রানে বোলার আকিলা ধনঞ্জয়ার হাতে ধরা পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ।এরপর দলীয় ১২৭ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে সাইফুদ্দিন রান আউটের শিকার হন। এর আগে তিনি রিয়াদের সঙ্গে ৩৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। উইকেটে এসে অধিনায়ক মাশরাফি(৫) দলীয় ১৪১ রানে অভিষিক্ত মাদুশানকার প্রথম শিকারে পরিণত হন। পরের বলেই আবার রুবেলকে(০) সরাসরি বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান মাদুশানকা।শেষ উইকেট হিসেবে টেস্টের সহ-অধিনায়ক মাহদুল্লাহ রিয়াদকে(৭৬) থারাঙ্গার ক্যাচ বানিয়ে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন মাদুশানকা। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন শিহান মাদুশানকা। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি ৪৪তম হ্যাটট্রিক। সাকিব আল হাসান ফিল্ডিংয়ের সময় ইনজুরিতে পড়ায় আর ব্যাটিং করতে না পারায় এখানেই থামতে হয় টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত ৭৯ রানের হার নিয়ে সিরিজ হারতে হয় টাইগারদের। শ্রীলঙ্কার পক্ষে শিহান মাদুশানকা তিনটি, চামারা ও ধনঞ্জয়া দুইটি করে উইকেট লাভ করেন। ম্যাচে দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অর্ধশত রান করায় উপুল থারাঙ্গাকে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করায় লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরাকে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ ঘোষণা করা হয়।অথচ এই লঙ্কানদেরই সিরিজের প্রথম ম্যাচে টাইগাররা ১৬৩ রানে হারায়। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মুখোমুখিতে টাইগারদের ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে লঙ্কানরা। এর আগে রুবেল-মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মাধ্যমে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কাকে ২২১ রানে বেধে ফেলে বাংলাদেশ। ফলে ট্রফি জিততে টাইগারদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২২২ রান।ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লঙ্কান ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা। তিনি করেন ছয় রান। গুনাথিলাকা সাজঘরে ফেরার পর বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু তাকে বেশি দূর যেতে দেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়েন মেন্ডিস। ৯ বল খেলে দুই চার ও তিন ছক্কায় মেন্ডিস করেন ২৮ রান।দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশল মেন্ডিস আউট হওয়ার পর উপুল থারাঙ্গা ও নিরোশান ডিকওয়েলার ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। দুইজনে মিলে ৭১ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। এই জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দলীয় ১১৩ রানে নিরোশান ডিকওয়েলাকে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন তিনি। ডিকওয়েলা করেন ৪২ রান।ইনিংসের ৩৬তম ওভারে হাফ সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গাকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। ৫৬ রান করে ফিরে যান থারাঙ্গা। ওয়ানডেতে থারাঙ্গার এটি ৩৭তম হাফ সেঞ্চুরি। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে রুবেল হোসেনের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন থিসারা পেরেরা। তিনি করেন ২ রান। ৪৫তম ওভারে আসেলা গুনারত্নেকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রুবেল হোসেন। ৪৮তম ওভারে দিনেশ চান্দিমালকে বোল্ড করেন রুবেল।শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন উপুল থারাঙ্গা। এছাড়া দিনেশ চান্দিমাল করেন ৪৫ রান। নিরোশান ডিকওয়েলা করেন ৪২ রান। বাংলাদেশের পক্ষে রুবেল হোসেন চারটি, মোস্তাফিজুর রহমান দুইটি, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১টি করে উইকেট লাভ করেন।