জাকির হোসেন, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ বছর শুরু হতে না হতেই
শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে নানা রকম বিজ্ঞাপন নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা। শিক্ষার্থী
জোগাড় করতে এক ধরনের প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছে কোচিং সেন্টারগুলো।
অভিভাবকদের মন জয় করতে বিভিন্ন রকমের প্যাকেজ অফারও দিচ্ছেন শিক্ষকরা। পৌরশহর ঘুরে
দেখা যায়, শহরটি’র অলি গলিতে প্রায় শতাধিক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে।
কোচিং সেন্টার গুলোর সামনে বড় বড় ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়ে নিজেদের
প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই চিত্র দেখা যায় উপজেলার গ্রাম এলাকাগুলোতেও। খোঁজ নিয়ে
জানা যায়, এইসব কোচিং সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষকরা বিভিন্ন সরকারি-
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। এ বিষয়ে সচেতন মহল মনে করছেন
স্কুলগুলোতে ভালো ভাবে পড়াশুনা না হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং সেন্টার মূখী
হচ্ছে। উপজেলার বথপালিগাঁও গ্রামের এরশাদ হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, তার
সন্তানকে কোচিংয়ে ভর্তি করার জন্য ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষক অনেকবার তার বাড়িতে
গিয়েছেন। অনেকেই আবার কম বেতনে পড়ানোর প্রস্তাবও দিচ্ছেন। বিভিন্ন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিংয়ের সাথে জড়িত থাকায় কোচিং হোমে একই শিক্ষক
ভালোভাবে পড়ান, কিন্তু স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস নেন না। এজন্য এক রকম বাধ্য হয়েই
সন্তানকে কোচিংয়ে দিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান,
বাবা-মায়েরা শুধু ভালো রেজাল্ট চায়। ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে কয়েকদিন
খেলাধুলা করেছি। এখন আবার কোচিং আর স্কুল নিয়ে ব্যস্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আরেক শিক্ষার্থী জানান, তাদের স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কোচিং না করলে কোন কোন
শিক্ষক তাদের সাথে খারাপ আচরণ সহ পরীক্ষায় কম মার্কস দেওয়ার হুমকিও প্রদান করছেন।
তাই তারা এক প্রকার বাধ্য হয়েই কোচিং সেন্টার ভর্তি হচ্ছে। এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ
শিক্ষক সমিতির সভাপতি মফিজুল হক জানান, সকাল হলেই যেমন মুরগীর পাইকাররা বাড়ি
বাড়ি গিয়ে মুরগি কেনে ঠিক তেমন করেই কিছু কিছু শিক্ষক সকাল হলেই বাড়ি
বাড়ি ছুটছেন শিক্ষার্থী জোগাড় করতে। শিক্ষা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ
বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরিফুল্ল্যাহ বলেন, কোচিং সেন্টারের বেড়াজাল থেকে
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বের করে আনতে হবে। এজন্য কঠোর আইন করা জরুরি।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত)খন্দকার মো.নাহিদ হাসান
জানান, স্কুল চলাকালীন সময় কোচিং চালানো যাবে না। একটি নির্দিষ্ট সময়ে
চালাতে পারে তবে ১০ জন ছাত্র-ছাত্রীর বেশি পড়াতে পারবে না এ নিয়ম না মানলে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।