অনলাইন ডেস্কঃ-
‘দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) যে আইনে বেগম খালেদা জিয়ার বিচার হচ্ছে সেই আইন তিনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে করা হয়েছে। মওদুদ আহমদ নিজেই এ আইন করেছেন। সেই আইনে তিনি বাড়ি হারিয়েছেন এবং অর্থ আত্মসাৎ মামলায় তাঁর বিচার হচ্ছে। তাই বেগম জিয়াকে বলব, ভবিষ্যতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে যেন মওদুদের কথা তিনি না শোনেন।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মোশাররফ হোসেন কাজলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হেসে উঠেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় মোশাররফ হোসেন কাজল এসব কথা বলেন। শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একটি চেয়ারে বসা ছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলীসহ বিএনপির নেতারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশরারফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, ‘আমি জানি আমার সামনে কে বসে আছেন? উনি সম্মানিত ব্যক্তি। সবার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মামলা পরিচালনা করি। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। সবাইকে সম্মান দেখিয়ে কথা বলে থাকি। তবে উনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৪ সালে দুদকের আইন তৈরি করা হয়। তখন আইনমন্ত্রী ছিলেন মওদুদ আহমদ। উনাদের তৈরি করা আইনেই মওদুদ আহমদ বাড়ি হারিয়েছেন এবং দুদক আইনে তাঁর বিচার হচ্ছে। আর বেগম খালেদা জিয়া বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি ম্যাডাম খালেদা জিয়া হয়তো আবারো প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেই সময় তিনি যেন মওদুদের পরামর্শ অনুযায়ী না চলেন। কারণ…।’ এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ বক্তব্যের বিরোধীতা করে হৈচৈ শুরু করেন।
এরপর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মাননীয় আদালত প্রধানমন্ত্রী,রাষ্ট্রপতি বা সেনাবাহিনী প্রধান হলেও কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উনি (খালেদা জিয়া) যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে তিনি শাস্তি পাবেন। অপরাধী যেই হোক আইন অনুযায়ী তিনি শাস্তি পাবেন। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মতো আমি কোরআনের কোনো আয়াত আপনাকে বলব না। ধর্মের ভয়ভীতি দেখিয়ে আপনাকে ভীত সন্ত্রস্ত করা ঠিক হবে না। ধর্ম আমরা সবাই পালন করি। নামাজ পড়ি আবার কোরআনও পড়ি। কিন্তু এখানে ভয় দেখানোর কিছুই নেই।’
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘মামলায় ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য আপনার সামনে উপস্থাপন করেছি। মামলার এফআইআর এবং সাক্ষী পর্যায়ে গিয়ে অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ভবিষ্যতে যেন এই ভুল কেউ করতে না পারে এ কারণে আমরা তার শাস্তি দাবি করছি।’
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্কের সারমর্ম উপস্থাপন করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড চেয়েছেন দুদকের আইনজীবী কাজল। এ মামলার প্রথমদিনে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক তুলে ধরে বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা অবস্থায় ট্রাস্ট গঠন করতে পারেন না। কারণ তিনি ১৬ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর এ কারণেই তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে ট্রাস্ট গঠন করতে পারেন না।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই ট্রাস্ট গঠনের সময় সোনালী ব্যাংকে যে হিসাব করা হয়েছে, সেখানে খালেদা জিয়া তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদ গোপন করেছেন। কিন্তু তিনি ঠিকানা হিসেবে ব্যহার করেছেন তৎকালীন মঈনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা।’ তিনি আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া ট্রাস্ট আইন ভঙ্গ করেছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে চারবার চিঠি দেওয়া হলেও তিনি এর কোনো উত্তর দেননি। পরে অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট হয়নি। এই অভিযোগে সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।’
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যে উদ্দেশ্যে ট্রাস্ট গঠন করেছেন, পরবর্তী সময়ে তা টাকা সংগ্রহের মধ্য দিয়ে তা প্রাইভেট ট্রাস্টে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না তাঁরাও সরকারি পদে ছিলেন। ট্রাস্টে তাঁরা সরকারি পদ ব্যবহার করতে পারেন না।