শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে রাস্তায় ফেলে স্ত্রীকে পেটানোর ঘটনায় স্বামী ইব্রাহিম (৩৮) গ্রেপ্তার
করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। রবিবার বেলা সাড়ে ১২টায় উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের
গোদারচালা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ২০জানুয়ারি উপজেলার এমসি
বাজারে ইব্রাহিম তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদা আক্তারকে প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনায়
নির্যাতিতা বাদী হয়ে ওই দিন বিকেলেই তাঁর স্বামী ইব্রাহিমকে প্রধান আসামী করে
শ্রীপুর থানায় শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিত্রে তাকে
গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পরপরই ইব্রাহিম গা ঢাকা দেয়ায় তাকে আটক করা যায়নি। পরে পুলিশ
ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার বিভিন্ন জায়গায় অব্যাহত রাখে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ
জানতে পারে ইব্রাহিম এলাকায় অবস্থান করছে। পরে রোববার গোদার চালা সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের সামনে হাবিবুর রহমানের দোকানে অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
ইব্রাহিম পুলিশের অবস্থায় টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে এলাকাবাসী
সহায়তায় পুলিশ প্রায় ২কিলোমিটার দৌড়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্য, গত সাত বছর আগে তিন সন্তান রেখে মামলার বাদী ফরিদার প্রথম স্বামী পল্লী
চিকিৎসক আব্দুল জলিল মারা যান। পরে ইব্রাহিম তাঁর স্বামী রেখে যাওয়া সম্পত্তির লোভে
ফুসলিয়ে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ইব্রাহিমকে নিয়ে পূর্বের সংসারের সন্তানদের সাথে
তাঁর মৃত স্বামীর মুলাইদ এলাকায় রেখে যাওয়া বসতবাড়ীতে তাঁরা বসবাস করে আসছিলেন।
পূর্বেও ইব্রাহিমের সংসারে প্রথম স্ত্রী ছিল। পরে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সার জন্য ইব্রাহিম
তাঁর উপর নির্যাতন করতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে প্রথম স্বামীর রেখে যাওয়া মুলাইদের
বাড়িটি বিক্রির জন্য সে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। সম্প্রতি ইব্রাহিম তৃতীয় আরেকটি
বিয়ে করে বউ বাড়ীতে আনে। এনিয়ে গত কয়েকদিন যাবৎ তাদের সংসারে সম্পর্কের
টানাপোড়েন শুরু হয়। ভরনপোষণও বন্ধ করে দেয় ইব্রাহিম। শনিবার স্বামীর কাছে খাবারের টাকা
চাইলে সে বেদম মারধোর শুরু করে। পরে, ফরিদা স্বামীর অত্যাচার থেকে পালানোর চেষ্টা করে এমসি
বাজার পর্যন্ত আসলে ইব্রাহিম তাঁর পথরোধ করে বেধম মারধোর শুরু করে। স্থানীয় এক যুবকের
মুঠোফোনে ধারণ করা নির্যাতনের ভিডিও চিত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রæত
ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। বিকেলেই পুলিশ নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে
তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পরে নির্যাতিতা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় স্বামী ইব্রাহিম (৩৮),
তৃতীয় স্ত্রী মৌরী আক্তার (২৫), মা জমিলা বেগম (৪৭), (ইব্রাহিমের শ্বাশুড়ি), শ্যালিকা নাসরিন
সরকার (১৯) ও ফারজানা সুলতানা (২২) এর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।