শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস
কক্ষে এক ছাত্রীকে চার ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা ও বেত্রাঘাত করা
প্রধান শিক্ষক আলী মুনসুর মানিক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক
মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১২ ফেব্রæয়ারি সোমবার রাতে মামলা
করেছেন ছাত্রীর বাবা। মামলা হওয়ার খবর পেয়ে ওই দুই শিক্ষক
গাঢাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক
(এসআই) মোস্তফিজুর রহমান। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা
চলছে বলে তিনি জানান।
এর আগে ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর জন্য নানা তৎপরতা
চালান প্রধান শিক্ষকসহ তাঁর কয়েকজন সহযোগী শিক্ষক।
নিজেদের টাকায় খাবার খাইয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে ওই ছাত্রীর
বিরুদ্ধে মানববন্ধন করানোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন তাঁরা।
এদিকে ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ১২ ফেব্রæয়ারি
দিনভর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কমিটির গ্রধান উপজেলা মাধ্যমিক
শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা
পেয়েছি। খুবই স্পর্শকাতর ঘটনা এটি। ফলে আগামীকাল (আজ)
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন
জমা দেব।’
৭ফেব্রæয়ারি বুধবার তেলিহাটী উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালে
মাঠে দুই ছাত্রের হাতাহাতি হয়। শিক্ষকরা তাদের ডেকে কারণ
জানতে চাইলে ওই দুই ছাত্র এই ছাত্রীকে পছন্দ করার কথা জানায়।
অবশ্য ছাত্রীটি তা জানত না। কিন্তু তাকে ডেকে শাস্তি হিসেবে
অফিসকক্ষে চার ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ওই সময় কয়েকজন
শিক্ষকের নানা অশালীন মন্তব্য আর গালাগালে অসুস্থ হয়ে পড়লেও
রেহাই মেলেনি মেয়েটির। তাকে নির্মমভাবে বেত্রাঘাত করেন
প্রধান শিক্ষক। অমানবিক এ ঘটনা নিয়ে ‘শ্রীপুরে ছাত্রীকে
অপবাদ দিয়ে বেত্রাঘাত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সোমবার
সকালে তারা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক আলী মুনসুর
মানিক, সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজন শিক্ষক
প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই ছাত্রীর
জন্য তাঁরা (শিক্ষকরা) বিপদে পড়েছেন বলে জানান। আর উদ্ধারের জন্য
সব শিক্ষার্থীর সহযোগিতা দরকার বলেও জানান শিক্ষকরা।
দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জানায়, সকাল ১১টার দিকে প্রধান
শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ছয়-সাতজন শিক্ষার্থীকে কিছু
কথা শিখিয়ে দেন। কথাগুলো তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে হুবহু
বলার জন্য নির্দেশ করেন তাঁরা। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তদন্ত
কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয়ে যান। তাঁরা বিকেল ৪টা পর্যন্ত
সেখানে অবস্থান করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
অপবাদ-অপমান ও নির্যাতনের শিকার মেয়েসহ তার বাবা, নানা ও
মামার সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।