স্পোর্টস ডেস্কঃ-
শ্রীলঙ্কায় আজই ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ ‘নিদাহাস ট্রফি’র পর্দা উঠতে যাচ্ছে। যতটা আলোর ঝলকানি দেখার আশায় ছিল নিদাহাস, শুরুর আগে তারাশূন্যতায়ই ভুগছে সিরিজটি। আগে থেকেই ছিলেন না দুই দলের নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে আঙুলের চোটে ছিটকে গেছেন বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও।
ভারতীয় দল বিশ্রাম দিয়েছে সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সঙ্গে দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও ভুবনেশ্বর কুমারকেও দেখা যাবে না বল হাতে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তো নেই-ই, পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার অনুপস্থিতি আসরটিকে করে দিচ্ছে অনেকটাই তারাশূন্য।
আর সে কারণেই পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে অন্যরা পাচ্ছেন দুর্দান্ত সুযোগ। ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে নিদাহাসের মঞ্চে তিন দলের ক্রিকেটাররা ব্যস্ত থাকবেন আজ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত। তিন দলেই সিরিজে আলো জ্বালানোর রসদ রয়েছে অনেকের মধ্যেই।
বাংলাদেশ :
তামিম ইকবাল : টেস্ট ও ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান রয়েছে তামিমের ঝুলিতে। মারকুটে ব্যাটিংয়ে ইনিংসের উদ্বোধন থেকেই গুঁড়িয়ে দিতে পারেন প্রতিপক্ষের সব পরিকল্পনা। ২০ ওভারের ক্রিকেটে দেশের হয়ে একমাত্র শতকের মালিকের দিকেই চোখ থাকছে ক্রিকেটানুরাগীদের। মাঠে নেমে ইনিংস শুরু করেছেন ৫৭ ইনিংসে, এক শতক আর চার অর্ধশতকে তামিমের মোট রান ১,২৩১।
মুশফিকুর রহিম : একটা সময় ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মুশফিকুর রহিমের কাঁধেই ছিল বাংলাদেশ দলের সব ফরম্যাটে নেতৃত্বের ভার। সময়ের বদলে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলেও ব্যাট হাতে মুশফিক এখনো নির্ভরতার প্রতীক। ৬৩ ম্যাচে ৮১৩ রান সংগ্রহ করা এই ব্যাটসম্যান ত্রিদেশীয় সিরিজে সামলাবেন উইকেটের পেছনটাও।
মাহমুদউল্লাহ : সাকিব আল হাসানের আঙুলের চোটে ঘরের মাঠেও লঙ্কানদের বিপক্ষে নেতৃত্বের দায়িত্ব চেপেছিল মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। দল হোয়াইটওয়াশ হলেও দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ রান আসে এই অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকেই। ৬২ ম্যাচে ৯২১ রান সংগ্রহ করা মাহমুদউল্লাহ টি-টোয়েন্টিতে দেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এক হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা দলপতিও নিজের রঙে রাঙাতে পারেন নিদাহাসের আসর।
ভারত:
রোহিত শর্মা : বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে রোহিত শর্মার ঘাড়েই চেপেছে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। তারকা এই ব্যাটসম্যান নিজের আলোতে আলোকিত করতে পারেন নিদাহাসের মঞ্চটাকে। দুই শতক আর ১২ অর্ধশতকে ৭৪ ম্যাচে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের টি-টোয়েন্টিতে মোট সংগ্রহ ১,৬৭৯ রান। ভারতের হয়ে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে রোহিতের ঝুলিতেই শুধু দুটি শতক রয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়ার আগে উদ্বোধনী এই ব্যাটসম্যান কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হতেই পারেন। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা চান্দিমালের দলের বিপক্ষেই!
সুরেশ রায়না : মাঝে এক বছরের মতো দলেই ছিলেন না সুরেশ রায়না। শেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ফের ডাক পেয়েছেন এই স্টাইলিস্ট বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পাঁচ তারকা ক্রিকেটার না থাকায় ভারতীয় দলে অভিজ্ঞতার অভাবটা পূরণ করতে পারেন ৩১ বছর বয়সী রায়নাও। ত্রিদেশীয় সিরিজের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের চিন্তা থাকবে তাঁকে ঘিরেও।
যুবেন্দ্র চাহাল : লেগস্পিনের জাদুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদেরই বিপাকে ফেলে দিয়েছিলেন যুবেন্দ্র চাহাল। এবার উপমহাদেশের মাঠে এই লেগির বল তো নিশ্চয়ই ছোবল দেবে আরো বিষে ভরা ঘূর্ণিতে। ১৬ ম্যাচে ডানহাতি এই স্পিনারের সংগ্রহ ২৭ উইকেট।
শ্রীলঙ্কা:
দিনেশ চান্দিমাল : ম্যাথিউস দল থেকে ছিটকে যাওয়ায় অধিনায়কের দায়িত্বটা ফের চেপেছে দিনেশ চান্দিমালের ঘাড়ে। সাদা পোশাকের লঙ্কান দলপতি শেষ সিরিজে বাংলাদেশের মাঠেও ২০ ওভারের ক্রিকেটে দলকে দিয়েছিলেন নেতৃত্ব। টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ডটা এত সমৃদ্ধ না হলেও ৫০ ম্যাচে ৭২২ রান করা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নিজের দিনে প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন।
কুশল মেন্ডিস : বাংলাদেশ সফরে কুশল মেন্ডিস ব্যাটের আগ্রাসনে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শুধু টেস্ট নয়, টি-টোয়েন্টির খোলসেও লঙ্কান দলের ব্যাটিংস্তম্ভ হওয়ার সব যোগ্যতাই তাঁর রয়েছে। ঘরের মাঠে মেন্ডিসও হতে পারেন স্বাগতিকদের জয়ের নায়ক।
থিসারা পেরেরা : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য শ্রীলঙ্কা থেকে উঠে আসা এখন পর্যন্ত একমাত্র প্যাকেজ এই থিসারা পেরেরা। সারা বছরই বিশ্বজুড়ে মাঠে গড়ানো ঘরোয়া টি-টোয়েন্টির আসরগুলোতে দেখা মেলে এই পেস অলরাউন্ডারের। ৬৮ ম্যাচে কোনো শতক পাননি, দেখেননি কোনো অর্ধশতকের মুখও। তারপরেও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ছোট ছোট ক্যামিওতে দলের মিডলঅর্ডারে এমন ব্যাটসম্যানের জুড়ি মেলা ভার। টি-টোয়েন্টির মঞ্চে উইকেটের অর্ধশতক থেকে পেরেরা রয়েছেন এক উইকেট দূরে। ৪৯ উইকেট নিয়েছেন মাঠে নামা ৬৮ ম্যাচে।
আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে নিদাহাস ট্রফির লড়াই। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ও ভারত। আর বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে বৃহস্পতিবার, প্রতিপক্ষ ভারত।