বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ-
‘আমাকে ছাড়া তোমার কোনো ভবিষ্যত নেই, আমাকে বাঁচতে দাও’‘প্রতিদিন আমি সর্বোচ্চ ৪জন মানুষের জন্য অক্সিজেন সাপ্লাই দেই,তোমার কি মনে হচ্ছে না এটা মূল্যবান সঞ্চয়’, ‘আমি বায়ু পরিষ্কার রাখবো, যেখানে তুমি শ্বাস নাও, এটা তোমার শিশুর জন্যও যদি আমায় বাঁচিয়ে রাখো…..এই কথা গুলো হচ্ছে চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের রাস্তার দুপাশে নিরীহ বৃক্ষ গুলোর।
কি মনে মনে ভাবছেন বৃক্ষ আবার কথা বলতে পারে নাকি?আমি বলব হ্যা; বৃক্ষ কথা বলতে পারে তবে সেই কথা বুঝার মত প্রয়োজন একটা প্রকৃতিক প্রেমি মন! আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, মানব জীবনের প্রতিটি অংশে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। বৃক্ষ অক্সিজেন দেয় কার্বন- ড্রাই অক্সাইড গ্রহণ করে। বৃক্ষ খাদ্য দেয়, বৃক্ষ কাঠ দেয়, মাটির ক্ষয়রোধ করে, সর্বপরি বৃক্ষ পরিবেশকে সজীব রাখে। বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য।
এমনিতেই নানা কারণে হুমকির মুখে আমাদের দেশের পরিবেশ তথা জলবায়ু। আবহাওয়া বা জলবায়ুকে জনবান্ধব করে তুলতে প্রয়োজন আমাদের প্রতিনিয়ত গাছ লাগিয়ে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে একটি চক্রের শিকার হচ্ছে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের দু’পাশের ছোট-বড় হাজার হাজার গাছ। ইতোমধ্যে গাছগুলোর কাটার ধূম পড়ে গেছে এবং একটি অংশ কেটে সেখানে লাল রঙের নম্বর বসিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে’‘তোমাদের আয়ু শেষ’’। খুব অল্প সময়ে কেটে ফেলা হবে রাস্তার দু’পাশের সবুজে ঘেরা গাছগুলো। পরিবেশগত দৃষ্টিতে গাছগুলো কাটা হলে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ু, বেড়ে যাবে উষ্ণতা। কিন্তু এই গাছ কেটে ফেলার পর যে প্রকৃতিক ভয়াবহতার দেখা মেলবে সেই ব্যাপারে নেই কারো কোন মাথা ব্যাথা।
কি অবাক হচ্ছেন তো? ভাবছেন আমি এই রাস্তার দু’পাশের কাজের বিরোধিতা করি!না, তা কিন্তু মোটেও নয়! রাস্তা আকার বৃদ্ধির ফলে দূর্ঘটনা কম হোক সেটা আমিও চাই।কিন্তু সম্পূর্ন রাস্তার বৃক্ষ গুলোকে একদম নিস্ক্রিয় করে এমন কাজের বিরোধিতা আমি অবশ্যই মন থেকে করি। আপনি বলতে পারেন যে রাস্তার কাজ শেষ হয়ে গেলে,আবার পুনরায় গাছ লাগানো হবে, কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পুনরায় গাছ লাগিয়ে আজকের এই গাছ গুলোর সমান গড়ে তুলতে কতটা সময়ের প্রয়োজন? কতটুকু মহতী উদ্যোগের প্রয়োজন?কে নিবে এই মহতী উদ্যোগ?এমন প্রশ্ন থেকেই যায়!
ঠিক আছে মেনে নিলাম, চাঁদপুর -কুমিল্লা আঞ্চলিক মহা-সড়কের রাস্তার দুই পাশে দুই ফিট করে মোটা চার ফিট রাস্তার কাজ হচ্ছে, এই চার ফিট রাস্তার করার জন্য এবং যানবাহন চলাচল উপযোগি করে তুলার জন্য আরো হয় তো চার ফিট জায়গা ক্লিয়ার রাখার প্রয়োজন।
কিন্তু আপনি লক্ষ করে দেখুন রাস্তার দুই পাশের সকল গাছ গুলো কেটে পেলা হচ্ছে এতে রক্ষা পাইনি ১/২ বছর বয়সের গাছ গুলোও এমন কি, যে গাছ গুলো সাবেক এবং বর্তমান রাস্তার কমপক্ষে ২০ ফিট দূরেও অবস্থানে আছে সেগুলোও রক্ষা পাচ্ছেনা। কিন্তু কেন সেই ২০ফিট দূরে থাকার গাছটি তো রাস্তার কাজ কিংবা যানবাহন চলাচলের বেগাত করেনা।তাহলে সেগুলো কেন কাটা হচ্ছে?
আমি বলব এখনো সময় আছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কার্বন- ডাই অক্সাইড এর অভাবে না রেখে গাছ গুলো রক্ষা করে একটি সুষ্ঠ সুন্দর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ উপহার দিয়ে যাই। আর এই ব্যাপারে আমাদের সকলকে দ্রুত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত।
সর্বশেষ কবিতার ভাষায় বলতে চাই।
কোথায় আর যাবে তুমি,বৃক্ষ!
আর একটু থাকো এখানে,
এই অদৃশ্য খরাডাকা রাস্তার দুপাশে
আর একটু ছায়া হও তীক্ষ্ণ রোদের দুপুরে
তুমি থাকলে,দেখছো না!
কী শীতল সুখ ভেসে আসে বাতাসে?
তুমি বরং যেওনা,
থেকে যাও যতক্ষণ হলুদ সূর্য লাল খরা নিয়ে আসে।
লেখক……
মো:জুয়েল রানা তালুকদার
মানবাধিকার ও সমাজকর্মী