বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ-
একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি আর নেই। গতকাল বুধবার রাতে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এই বীরপ্রতীক।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, রাত ১১টা ৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
কাঁকন বিবির মেয়ের জামাই আবদুল মতিন জানান, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ায় কাঁকন বিবিকে গত সোমবার ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর ফুসফুসের একাংশ কাজ করছিল না বলে চিকিত্সকরা তখন জানিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১১ সালে কাঁকন বিবিকে সম্মাননা দিয়েছিল কালের কণ্ঠ। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি কালের কণ্ঠ’র প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একাত্তরের বিজয়িনী বিশেষ সম্মাননা’ যে ১২ জন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তিনিও ছিলেন।
১৯৭১ সালে তিন মাস বয়সী মেয়ে সখিনাকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যান কাঁকন বিবি। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করেন। ওই বছর জুন মাসে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাদের বাংকারে আটকে রেখে দিনের পর দিন তাঁর ওপর নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি সেনারা। পরে ছাড়া পেয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন। রহমত আলীর দলের সদস্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন এই বীর নারী। একই সঙ্গে চালিয়ে যান গুপ্তচরের কাজ।
একাত্তরের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলার সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকটি গুলি কাঁকন বিবির শরীরে বিদ্ধ হয়। ঊরুতে কয়েকটি গুলির দাগ এখনো আছে। টেংরাটিলা যুদ্ধের পর আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বালিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দূরবীণটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় ৯টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন কাঁকন বিবি। ১৯৯৬ সালে তাঁকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
কাঁকন বিবির বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে। খাসিয়া সম্প্রদায়ে জন্ম নেওয়া এই নারীর সঙ্গে ১৯৭০ সালে বিয়ে হয়েছিল দিরাই উপজেলার শহীদ আলীর।