বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কবে হবে জাতীয় নির্বাচন, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩ মোরেলগঞ্জে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার উদ্বোধন জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কখন, যা বললেন মির্জা ফখরুল গুম-খুনে আর জড়াবে না র‍্যাব : মহাপরিচালক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম সমর্থন করে না ভারতের মোদি সরকার সোনারগাঁয়ে দুটি চুনা কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন পাঁচবিবিতে জনবল সংকট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ক্যারিবিয়ান জয়ের পর তাসকিন-তাইজুল যা বললেন

নৌকায় ভোট দিন উন্নয়ন দেব, পটিয়ার জনসভায় শেখ হাসিনা

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮
  • ২৪৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ- 

চট্টগ্রামবাসীকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিপক্ষে উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই দেশের উন্নতি হবে। আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমি আপনাদের উন্নয়ন দিতে পারব। আমরা যদি নৌকায় ভোট পাই, আগামীতে ক্ষমতায় আসি, আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সুন্দর জীবন দেব। সেই ওয়াদা করছি।’ এ সময় তিনি হাত তুলে চট্টগ্রামবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতি চাইলে জনতা সমস্বরে তাদের সম্মতি জানায়।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শেখ হাসিনা। চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বিলোপের আন্দোলনের মুখেই গতকালের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়ে বলেন, ‘কোটাব্যবস্থা রাখতেই হবে। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কাজেই তাঁদের সম্মান দিতেই হবে। তাঁদের ছেলে, মেয়ে, নাতি, পুতি পর্যন্ত যেন চাকরি পায়, তার জন্য কোটার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হলে মেধাবীরা সুযোগ পাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজার পর দলটির নেতাদের বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আদালতের রায় মানে না। আইন না মানাই তাদের চরিত্র। কিন্তু দেশের জনগণ কোনো দুর্নীতিবাজের সঙ্গে নেই। তিনি বলেন, দেশের মাটিতে কোনো দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই। বাংলাদেশ হবে শান্তির দেশ।

তীব্র রোদ উপেক্ষা করে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেয় জনসভায় যোগ দিতে আশা হাজার হাজার নেতাকর্মী। দুপুর ১২টার মধ্যেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জনসভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটাই প্রথম পটিয়া সফর। এবার নির্বাচনের বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহারস্বরূপ চট্টগ্রামে ৪১টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাঁর আগমনকে বরণ করে নিতে সাজ সাজ রব উঠেছিল চট্টগ্রামে। মোড়ে মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। পাশাপাশি বড় বড় বিলবোর্ড আর তোরণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র শোভা পায়। মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও তাঁদের নামে ব্যানার, বিলবোর্ড টাঙান। প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে পটিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থের নৌকা আকৃতির মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশে তিনটি প্রবেশপথ রাখা হয়। তিনি বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে জনসভা মঞ্চে আসেন। জনসভায় আগত নেতাকর্মীরা জানায়, তাদের প্রিয় নেতা চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে এই প্রথম চট্টগ্রামের কোনো জনসভায় বক্তৃতা করলেন নেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাদের প্রিয় নেতাকে স্মরণ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মহিউদ্দিন চৌধুরী গত বছর মৃত্যুবরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নৌকায় ভোট চেয়ে আরো বলেন, ‘আমরা আজকে দেশের উন্নতি করছি, কিন্তু কাদের স্বার্থে? আপনাদের স্বার্থে। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা আমার কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আগামীতে ক্ষমতায় আনবেন।’ অতীতে চট্টগ্রামবাসীর সহযোগিতার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এ জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৪ সালে ও সরকার হটাতে ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংস ঘটনার কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের হাত থেকে মা-বাবা থেকে শুরু করে কোলের শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি। ড্রাইভার-হেল্পার কেউ না। খালেদার নির্দেশে পুড়িয়ে মারা হয়েছে এসব মানুষকে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, কোনো মানুষ মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে পারে? পারে না। আসলে ওরা (বিএনপি) কোনো মানুষ না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এই চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার করার সময় উদ্ধার করা হয়েছে। কে করেছে এটা? তাঁর ছেলে তারেক রহমান। ক্ষমতায় থাকতে কালো টাকা বানিয়েছে, আবার কালো টাকা সাদা করেছে। এত টাকা আসে কোথা থেকে? মানি লন্ডারিং করেছে, দুর্নীতি করে টাকা পাচার করেছে। তারা দুর্নীতি করে ধরা পড়েছে। এ জন্য সিঙ্গাপুর কোর্টে বিচার হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে টাকা এনে বাংলাদেশের টাকা বাংলাদেশের জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এতিমখানার জন্য টাকা আসছে। কোরআন শরিফে লেখা আছে—এতিমের হক কেড়ে নিও না। এতিমের সম্পদ লুট করো না, এতিমকে তার ন্যায্য হক দিয়ে দাও। সেই কোরআন শরিফের নির্দেশ না মেনে এতিমের একটা টাকাও এতিমকে দেয়নি। সব নিজেরা আত্মসাত্ করেছে। মামলা তো আওয়ামী লীগ সরকার দেয়নি। দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কারা? তারই বেছে নেওয়া মঈনুদ্দীন-ফখরুদ্দীন-ইয়াজউদ্দিন। তারাই দিয়েছে মামলা, সেই মামলায় আজ শাস্তি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। আমেরিকার গ্যাস কম্পানি বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করবে ভারতের কাছে। আমেরিকা ষড়যন্ত্র করে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দিল না।’

চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, এত নাম বলেও শেষ করতে পারব না। জামালউদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেল বিএনপির লোক। ছয় মাস পর তাঁর কঙ্কাল পাওয়া গেল। তারা শুধু আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তা নয়, নিজের দলের নেতাকর্মীদেরও ছাড়েনি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে, কারো কাছে হাত পেতে নয়। কেউ ভিক্ষুকের অপবাদ দিতে পারবে না। আপনারা জানেন, পদ্মা সেতু নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম।’

চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৮টি প্রকল্প উদ্বোধন করে গেলাম। আরো কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। আরো কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এই উন্নয়নগুলো আপনাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। কক্সবাজার পর্যন্ত চার লেন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা উড়াল সেতু করে দিচ্ছি। কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু করে দিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক ছাত্রনেতা শাহাজাদা মহিউদ্দিন প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধন : এর আগে গতকাল চট্টগ্রামে নেভাল একাডেমিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ প্রতিকৃতি ভাস্কর্য এবং বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451