হাসান মাহমুদ,
লালমনিরহাট প্রতিনিধি ঃ
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় বাপের জমি বিক্রির ও
যৌতুকের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শাহানারা বেগম নামে
এক গৃহবধুর মাথার চুল ব্লেড দিয়ে ন্যাড়া করে দেয়ার
অভিযোগ উঠেছে তার পাষন্ড স্বামী, ভাসুর ও তার দুই ননদের
বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বুধবার রাতে গৃহবধুর স্বামী ও তার এক ননদকে
গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। নির্যাতনের স্বীকার ওই গৃহবধু
বর্তমানে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় রয়েছেন।
এর আগে বুধবার (২৮ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার
সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি গ্রামে ঘটনাটি
ঘটেছে। পরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই গ্রহবধু তার স্বামীসহ ৪
জনের নামে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযোগটি আমলে
নিয়ে দুইজনকে গ্রেফতার করে।
নির্যাতনের শ্বীকার গৃহবধু উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের
মৃত ঝুল্লুর রহমানে ছোট মেয়ে।
আটককৃতরা হলেন, উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর
হলদীবাড়ি গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে বাবলু মিয়া ও তার
বড় বোন মহুরন নেছা।
হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতনের শ্বীকার শাহানারা বেগমের
সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রায় ১০ বছর পুর্বে বাবলুর
সাথে বিয়ে হয় তার। চার সন্তানের জননী শাহানারা বেগমের
বিয়ের সময় তার পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবার দুই লক্ষ টাকা
যৌতুক দাবি করেন। গরীব বাবার ২ লক্ষ্য টাকা দেয়ার সামর্থ্য না
থাকায় তখন প্রায় ১লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে এনে স্বামীর
হাতে তুলে দেন। তারপরেও আরো টাকা আনার জন্য নানা ভাবে
শাহানারা বেগমকে চাপ দিতেন বাবুল ও তার পরিবার।
এরই মধ্যে কিছুদিন আগে শাহানারার বাবা মারা যায়।
তখন বাবার সম্পত্তি থেকে ভাগ পাওয়া ১০ শতাংশ জমি বিক্রি
করে ও যৌতুকের বাকী এক লক্ষ্য টাকা আনার জন্য চাপ প্রয়োগ
করে। কিন্তু শাহানারা তার ভাগের জমি বিক্রি বা যৌতুকের সেই
টাকা দিতে অপারগতা জানালে তার উপরে নেমে আসে
নির্যাতনের খড়ক।
ঘটনার দিন বুধবার সকালে আবারো সেই জমি আর
যৌতুকের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। শাহানারা বেগম এর
প্রতিবাদ করলে স্বামী ও পরিবারের সকলের সাথে ঝগড়া লাগে।
এমবস্থায় স্বামী বাবুলসহ ভাসুর ও তার দুই বোন তাকে মারধর
বেধড়ক মারধর শুরু করেন। শুধু তাই নয় এক পর্যায়ে স্বামী বাবুল
ত তার বড় ভাই, দুই বোন মিলে শাহানারা বেহমের হাত-পা বেধে
গলায় ছোড়া লাগিয়ে তার মাথা চুল ব্লেড দিয়ে নেড়া করেন
এবং ঘরের মধ্যে তালাবন্ধ করে রাখেন।
এদিকে দুপুর বেলা বাবলু মিয়া বাজারে গেলে ওই
সুযোগে শাহানারা বেগম ঘরের বেড়ার বাঁধন কেটে ভুট্টা
ক্ষেতের ভিতর দিয়ে পালিয়ে এসে হাতীবান্ধা হাসপাতালে ভর্তি
হন। অতঃপর সন্ধ্যার দিকে শাহানারা বেগম বাদী হয়ে তার
স্বামীসহ ওই ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
এ বিষয়ে কথা হলে সিন্দুর্না ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল
আমিন বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। আইনের উর্ধে কেউ নয়।
কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
ওই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য জাহেদুল ইসলাম জাহিদ
বলেন, বাবলুর পরিবারের সকল সদস্য হট মেজাজি লোক, তারা
এলাকার কাউকেই মানেন না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতীবান্ধা থানার উপ-
পরিদর্শক(এসআই) আব্দুল গনি জানান, স্ত্রীকে নির্যাতনের
ঘটনায় স্বামী ও তার বোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদেও
গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ওসি তদন্ত সুমন কুমার মহন্ত
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে থানায় একটি মামলায় দায়ের করা
হয়। এছাড়া তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে।