গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
ফিরুজা বেগম এক দুখিনী মা” তারও ছিল সুন্দর একটি সাজানো
গোছানো সংসার। স্বামী শরাফত আলী ছিলেন শ্রীপুর বিআরডিবির
একজন পরিদর্শক। সংসারের সচ্ছলতা আনতে একসময় স্বল্প বেতনের
চাকুরী ছেড়ে ব্যবসায় মন দেন শরাফত আলী। সময়ের বিবর্তনে তাঁদের
বসবাসের এলাকাটি শিল্পায়নে পরিনত হলে দ্রুতই পরিবারটি ভালো
একটি অবস্থানে চলে যায়। ফিরুজা- শরাফত দম্পতির একমাত্র সন্তান
ছিলেন ফারুক হোসাইন প্রিয়ক।
কিন্তু সবার কপালে যে বিধাতা সুখ চিরস্থায়ী রাখেন না তাঁর উজ্জলতম
নিদর্শন শ্রীপুরের এই ফিরুজা বেগম। ২০১২ সালেই শরাফত আলী
অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে কোন লাভ
হয়নি।এর এক বছর পর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শরাফত আলী মারা যান। আর
এখান থেকেই ফিরুজার কষ্টের শুরু। সচ্ছল সংসারেও স্বজন হারানোর অভার
যে অপূরনীয় তা উপলব্দি করতে শুরু করেন এই ফিরুজা বেগম।
এবার ছেলে ফারুক হোসাইন প্রিয়ককে নিয়ে ঘুরে দাড়ানোর
প্রতিজ্ঞা করলেন ফিরুজা বেগম। ছেলেকে বিয়ে করান, সংসারে চলে
আসে ফুটফুটে আদরের নাতনী প্রিয়ন্ময়ী তামাররা। স্বামী হারানো
বেদনার মধ্যেই আবার সংসারটিতে তৈরী হয় সুখের আবহ। আবারও
বিধাতার হাতের পরশ, এবার কেড়ে নিলেন তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র
অবলম্বন ছেলে ও নাতনীতে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি পরিবারের
বংশবৃদ্ধির পরিসমাপ্তি ঘটালেন। থেমে গেল একটি প্রজন্ম। আর শুধু
বেঁচে রইলেন পরিবারের একমাত্র সদস্য ফিরুজা বেগম। গত ১২ মার্চ
নেপালের বিমান দুর্ঘটনার মধ্য দিয়েই ফিরুজা বেগম একা হয়ে
গেলেন। এর পর থেকেই স্বজনদের কবর পানে চেয়েই দিন অতিবাহিত হচ্ছে
ফিরুজা বেগমের।
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সন্তান ও নাতনীর মৃত্যুর খবর ফিরুজাকে দেয়া
হয় ঘটনার চারদিন পর আর তাঁদের মৃতদেহ বাড়িতে আসে ঘটনার
সাতদিন পর। বিধাতার সিদ্ধান্তের উপর কারো হাত নেই তা উপলব্ধি করেই
ফিরুজা বেগম বুকে পাথর চেপে রয়েছেন। আর কটা দিনই বা
বাঁচবেন,বাকি জীবন স্বজনদের কবর পাণে চেয়ে দিন কাটানোর লক্ষেই
তাদের করব দিয়েছেন বাড়ির আঙিনায়।দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ির
বারান্দায় বসেই সেখান থেকেই কবর পানে চেয়ে থাকেন ফিরুজা
বেগম।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেষা শ্রীপুরের জৈনা
বাজারের বাড়িতে গিয়ে দেখা ও কথা হয় ফিরুজা বেগমের সাথে।
তিনি জানান, তাঁর ছেলে তাকে ছাড়া কখনও থাকতে পারত না,তাঁর
নাতনীও তাকে এক মুহুর্ত না দেখলেই অস্থির হয়ে পড়ত, কিন্তু এখন সবই
অতীত। তাদের স্মৃতিগুলোই বারবার এখন চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে।
তাই প্রতিটি মুহুর্তই তাদের কবরগুলোর দিকে চেয়ে থাকি। এ ছাড়া
যে আমার আর বেঁচে থাকার অবলম্বন নেই।