বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ-
পণ্য পরিবহনে পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে রমজান মাসে নানা আয়োজনকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের অবৈধ রসিদ ধরিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এসব চাঁদাবাজি বন্ধ চান ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বন্ধ হলে এবং পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকলে রমজানে পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে।
রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে ঢাকা চেম্বারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ঈদে যানজট ও নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। চাঁদাবাজির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, গাড়িচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, রোড পারমিট ও ওভারলোড না করলে চাঁদাবাজি হবে না। কিন্তু সব জেনেও অতিরিক্ত পণ্য নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য পুলিশ রাস্তায় গাড়ি থামায়।
তিনি বলেন, সরকার নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশ নিয়োগ করেছে। এই পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। পুলিশ সুযোগ পায় যখন ব্যবসায়ীরা অনিয়ম করেন। গাড়ির কাগজ ঠিক থাকে না। তাছাড়া এখন মাদক বাড়ছে। এ কারণে পুলিশের চেক করতে হচ্ছে। দু’একটি ক্ষেত্রে হয়তো বেশি বাড়াবাড়ি হয়। সেটা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের সঠিক তথ্য দিতে হবে। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। সরকার কাউকে ছাড় দেয় না। চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সভায় বিশেষ অতিথি কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রমজানে পণ্যের মূল্য, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন ক্রেতারা। তবে ক্রেতারা কেনাকাটার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করলে পণ্যের দাম তেমন পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন তিনি। তিনি ক্রেতাদের অতিরিক্ত পণ্য কেনাকাটা বন্ধের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, রমজানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট ও বন্দরে জাহাজজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম গড়ে ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছিল। এর কারণ ছিল প্রথাগত বাজার সরবরাহ প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়া, অতিরিক্ত মজুদের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, দুর্বিষহ যানজট এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়। এবার রমজানে পণ্যের দাম বাড়লে মধ্যবিত্তের আয় ও ব্যয়ে সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে হবে। তিনি বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজর দিতে হবে। এ ছাড়া পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়া রহমান। তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের দেখার সময় এসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত একটি শ্রেণিকে পুনর্গঠন করতে হবে। রাজনৈতিক দলের জবাবদিহি থাকতে হবে। পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ইফতারের আয়োজন থাকে। আর এর জন্য চাঁদা দিতে হয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবদুস সালাম রমজানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। সেন্টার ফর এনআরবির সভাপতি শেকিল চৌধুরী বলেন, রমজানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে টাকা দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন আয়োজনের জন্য চাঁদা দিতে চাপ দেয়। বিশেষ করে পরিবহন ও ইফতার পার্টির চাঁদা। ব্যবসায়ীরা এটা বাড়ি থেকে এনে দেবে না। এটি পণ্যের দামে প্রভাব ফেলে।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসেম বলেন, রমজানে প্রতিটি পণ্যের ট্রাকে বিভিন্ন নামে রসিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়। এটি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ ১১ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ হলে পণ্যের দাম ঠিক থাকবে না।
ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশ এগিয়ে গেলেও নৈতিকতার দিকে থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। রমজানে রিকশা ও ভ্যান থেকেও পুলিশ চাঁদা নেয়। চাঁদাবাজি বন্ধে শুধু আইওয়াস না করে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শুধু পুলিশ নয়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি হয়। ঢাকা-চট্টগ্রামের তিন স্থানে ইচ্ছাকৃতভাবে যানজট সৃষ্টি করে চাঁদা আদায় করা হয়।
ঢাকা চেম্বারের পরিচালক আলাউদ্দিন মালিক বলেন, রমজান পুলিশ গিয়ে ভ্যাটের চালান চায়। পুলিশের এসব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। আলাউদ্দিন বলেন, টিসিবি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করে বাজারে ছাড়লে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
নারী উদ্যোক্তা শামসুন নাহার বলেন, রমজানের নিত্যপণ্য দ্রুত আনার সুযোগ দিতে হবে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে ২ থেকে ৩ দিন ট্রাক বসে থাকে। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ায় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়।