হেলাল শেখঃ
ঢাকার সাভার জোনাল অফিস তিতাস গ্যাস টি এন্ড ডি কোম্পানী লিমিটেড এর বিভিন্ন এলাকায়
অবৈধ হাজার হাজার সংযোগের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। একদিকে
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর অন্য দিকে পুনরায় সংযোগ দিয়ে অতিষ্ট করে ফেলছে তিতাস কোম্পানীর
কর্মকর্তাদের। এরই প্রেক্ষিতে কোম্পানীর বিশেষ অভিযান চলছে। সেই সাথে প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে
১৫ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার রেকর্ড রয়েছে এবং অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী ৪৭
জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। এই এলাকায় প্রায় এক লাখেরও উপরে তিতাস গ্যাসের সংযোগ রয়েছে।
উক্ত মামলার আসামিরা ৪৭ জন, অজ্ঞাত আরও অনেকেই রয়েছে। পুলিশ জানায়, এ
মামলার আসামিসহ দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বিশেষ করে, গ্যাসের সংযোগ ব্যবহারকারী অনেকেই বলেন, আমরা এক একটি সংযোগ পেতে ৫০ থেকে ৬০
হাজার করে টাকা দিয়েছি। আমাদেরকে বলা হয়েছে দ্রুতই এই গ্যাসের সংযোগ বৈধ করে দেওয়া হবে। এক
একটা সংযোগের ব্যাপারে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। তাহলে প্রশ্ন কারা এই
টাকা গ্রহণ করেছেন? এবং একাধিকবার টাকা নেওয়ার পরেও সেই সংযোগ আবার বিচ্ছিন্ন করা হয়
কেন, তা ভূক্তভোগীদের দাবী, শুধু আমাদের বিচার কেন করা হবে? সংশ্লিষ্ট যারা এর সাথে জড়িত তাদেরকেও
আইনের আওতায় আনা হোক। অন্যদিকে বৈধ গ্রাহকদের অভিযোগ, অবৈধ সংযোগের কারণে আমরা
ঠিকমতো গ্যাস পাই না। রাত ১২ টার পরে গ্যাস আসে আবার ভোর ৪ টা বাজার আগেই গ্যাস চলে যায়, এ
যেন ভেলকিবাজির খেলা শুরু হয়েছে! বৈধ গ্রাহকদের অনেকেরই বাসায় ৬ থেকে ১০টি চুলা রয়েছে, বাসার
ভাড়াটিয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০ জন।
১৭/০৪/২০১৮ ইং সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকার শিল্পাঞ্চল সাভার, আশুলিয়ায় প্রায় ১ কোটি
মানুষের বসবাস। সেখানে শিল্প কারাখানার শ্রমিক নি¤œ আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশী। এ বিষয়ে
গার্মেন্টস কর্মী শাহানা (৩০) ও ইসরাত জাহান (২৭), নাজমুল হোসেন (৩২) বলেন, সারাদিন অফিসে
কাজ করে রাত ১০ টার পরে বাসায় ফিরে দেখা যায় যে, চুলার গ্যাস নেই। কখন রান্না করবো ও কখন খেয়ে
দেয়ে ঘুমাবো এটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। রাত ১২ টার পরে গ্যাস আসলে তখন রান্না করতে করতেই দেখা
যায় রাত দুইটা বেজে যায়। ঘুমানোর পরে আবার সকালে ৭ টার মধ্যে রান্না শেষ করে গোসল ও খাওয়া দাওয়া
করে অফিসে যেতে হয়। প্রশ্ন তাহলে, কয় ঘন্টা ঘুমাতে পারি আমরা? মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ঘুমালে মানুষ
অসুস্থ্য হয়ে যায়, একদিকে অফিসের কাজের টার্গেট পূরণের চিন্তা আবার অন্য দিকে বাসায় চুলার
গ্যাস থাকে না সেই চিন্তা, এভাবে মানুষ বাঁচে কি করে? এই প্রশ্ন মানণীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী
শেখ হাসিনার কাছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষগুলো সরকারের কাছে আমাদের খাদ্য ও বাসস্থান এবং নিরাপত্তা
কি পেতে পারি না?
জানা গেছে, ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তালা ও বাংলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়
তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যাবস্থাপক মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিশেষ অভিযানে প্রায়
প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছেন।
গত ৮ ও ৯ তারিখ শনিবার ও রবিবার সকাল ১০টা থেকে এ অভিযান শুরু করা হয়, এ অভিযান প্রতিদিনই সন্ধায়
সমাপ্ত করা হয়, এসময়ে একাধিক সোর্স লাইনসহ প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর মধ্যে রূপায়ন স্বপ্ননিবাস এর ভিতরে একটি বিলাসবহুল বাড়ির অবৈধ সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, ঐ বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে অথচ, ঐ বাড়ীতেই চুরি করে
অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ ব্যবহার করার অভিযোগে লাইন বিচ্ছন্ন করেন তিতাস কোম্পানী।
গত ০৯/০৪/২০১৮ইং তারিখ সোমবার সকাল ১০টা থেকে আশুলিয়ার বাংলা বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা
করেন তিতাস গ্যাস কোম্পানি। আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড এর বাংলা বাজার এলাকার
(বাঁশ বাজার) সংলগ্নে অভিযান চালানো হলে, সেখানে ২টি সোর্স লাইনের সন্ধান পাওয়া যায়। এ
এলাকায় ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
উক্ত অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, সাভার তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যাবস্থাপক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, উপ:
ব্যাবস্থাপক হাজী আব্দুর রহিম, মোঃ হাসান, মোঃ আনিছুজ্জামান, মোঃ মান্নান, টেকনিশিয়ান মোঃ
হাবিবুর রহমান, মোঃ গিয়াস উদ্দিন এবং এস আই রাকিবুল ইসলাম, এ এস আই সাইদুর রহমানসহ
পুলিশের একটি টিমসহ এসব অভিযানে প্রায় প্রতদিনই তিতাস কোম্পানীর কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার
স্বার্থে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে সাভার জোন তিতাস কোম্পানির ব্যাবস্থাপক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, তিতাস কোম্পানির
সংযোগ যারা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, ইতিপূর্বে অবৈধ
সংযোগ ব্যবহারকারী দোষীদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা করা হয়েছে।