বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যন তারেক রহমানের ‘সাহস’ থাকলে তাকে দেশে এসে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার ঢাকায় দলীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে তারেক রহমানের সাহস আছে কিনা, রাজনীতি যখন করে, তখন বিদেশে বসে দেশের রাজনীতির অঙ্গনে শব্দ বোমা ফাটাচ্ছেন কেন? আসুন, রাজপথ মোকাবিলা করুন। কত সাহস আছে… রাজনীতি যখন করেন, জেলে যাওয়ার সাহস নেই, সেই রাজনীতি কোনো দিন সফলকাম হবে না। রাজনীতি করলে জেল জুলুম সহ্য করতে হবে।’
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান তারেক রহমান। তখন থেকে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে দুই বছর আগে মুদ্রাপাচার মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাই কোর্ট। আর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। ওই মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে তারেকের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দি। তার অনুপস্থিতিতে পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে লন্ডন থেকে দল পরিচালনায় নির্দেশনা দিচ্ছেন তারেক রহমান।
যুক্তরাজ্য সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, দুই মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
তার ওই বক্তব্যকে ‘প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার রোডম্যাপ’ আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিটউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটির সেমিনারে সাংবাদিকরা তারেককে ফেরানোর বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চান, এক্ষেত্রে কোনো ‘রাজনৈতিক সমীকরণ’ কাজ করছে কি না।
জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তারেক রহমানকে কে ফিরিয়ে আনবে? আমরা ফিরিয়ে আনলে তো সেটা বিদেশে পালিয়ে থাকা দণ্ডিত আসামিকে আইনগতভাবে ফিরিয়ে আনব, সেভাবে আদালতের নির্দেশ আছে। সেক্ষেত্রে কোনো সমীকরণের বিষয় তো নেই।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলের যে ঐকমত্যের কথা বলেছেন, সে বিষয়েও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে কাদের বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার এই দয়িত্বটা ফখরুল সাহেব নিজেও নিতে পারেন। তারা (বিএনপি) নিজেরাই তো ঠিক নেই। কখনও বলে সহায়ক সরকার কখনও বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমরা কোনটা গ্রহণ করব?’
‘স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, আর পাঁচ ছয় মাস পরে নির্বাচনের তফসিল। নির্বাচনের আগে এখন আর সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য দেশে যেভাবে হচ্ছে সেভাবেই হবে। তার বাইরে যেতে চাইলে চিৎকার করতে পারেন, আন্দোলন করে আদায় করবেন… এই কথা তো শুনেছি নয় বছর আগে থেকে। নয় বছরে নয় মিনিটও দাঁড়াতে পারেননি।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন যেহেতু খুব বেশি দূরে নয়, সেহেতু এখন আর তিনি সভা সেমিনারের পক্ষপাতি নন।
‘এখন আমাদের অ্যাকশন প্রোগ্রাম নিতে হবে। বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা সেমিনার করব… প্রচার সেল তা করেও আসছে। এ মুহূর্তে এটার আর প্রয়োজন নেই। এখন অনেক কাজ রয়েছে।… এয়ার কন্ডিশন্ড রুমে সেমিনার না করে তাপদগ্ধ মাঠে বেরিয়ে পড়তে হবে।’
কাদের বলেন, তফসিলের আগে হাতে আছে আর ছয় মাস, কিন্তু এখনও আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ‘থিম স্লোগান’ ঠিক হয়নি, যেমন আগে ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ, ভিশন ২০২১’।
‘আমরা ফ্রি স্টাইলে একজন এক একটা বলে যাচ্ছি। আমার মনে হয় একটা স্লোগান হওয়া উচিত। সেটা হতে পারে, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। হতে পারে ‘বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ । ‘সবার জন্য সোনার বাংলা’ও হতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে অবস্থানে কিছু ‘দুর্বলতা’ চোখে পড়ে জানিয়ে প্রচার সেলকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেন ওবায়দুল কাদের।
দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ‘কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ করতে হবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন সেমিনারে বলেন, ‘রাজস্ব ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। কোনো কঠিন কাজ নয়, ট্যাক্স সিস্টেমকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, এটাও কোনো কঠিন কাজ নয়। সুদের হারের ব্যবস্থাকেও সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।’
‘এই তিনটা কাজ যদি আমরা করতে পারি তাহলে ২০২৫ সালে যেখানে আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আছে ১০, তখন হবে ২০। আমার ইনভেস্টমেন্ট জিডিপি রেশিও এখন আছে ৩১, তখন হবে ৩৭, মাসিক প্রবৃদ্ধি এখন আছে ৭.৫৬ তখন হবে ১০।’
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সেমিনারে বক্তব্য দেন।