জাহিদ হাসান সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে: জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চরা অঞ্চলে অবস্থান করা
ভারতীয় বুনো হাতিটি কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না উদ্ধারকর্মীদের। সর্বশেষ বুধবার সকালে চেতনানাশক
ইনজেকশনেও কাজ হলো না। টানা ১১ দিনের অভিযানেও নিরাশ হতে হয়েছে উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী
বিশেষজ্ঞদের।
উদ্ধার টিমের সাথে থাকা স্থানীয় বন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে হাতিটি
কামরাবাদ ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় ডাঙার কাছাকাছি পৌছে। এ সময় হাতিটিকে অচেতন করতে প্রায়
১০ গজ দূর থেকে ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে চেতনানাশক
ইনজেকশন নিক্ষেপ করেন। কিন্তু ইনজেকশনটি হাতির চামড়া ভেদ করে মাংশে প্রবেশ না করে ফিরে আসে। তার
কিছুক্ষন পরই হাতিটি স্থান পরিবর্তন করে ধারাবর্ষা গ্রামে বন্যার পানিতে অবস্থান নেয়।
বাংলাদেশ টিমের প্রধান বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক বাবু অসিম মল্লিক বলেন, হাতিটি উদ্ধার
করতে হলে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করতে হবে। কিন্তু ডাঙায় না ওঠায় এখনো সম্ভব হয় নি। তবে হাতিটি
এখনো উদ্ধার না হলেও সার্বক্ষনিক নজরে রাখা হয়েছে।
এদিকে হাতিটি দীর্ঘদিন পানিতে অবস্থান করায় বর্তমানে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও তিনি জানান।
সুত্র জানায়, প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় হাতি উদ্ধার সম্ভব না হওয়ায় প্রাকৃতিক ও কৌশলগতভাবে উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু
হয়। এজন্য চট্টগ্রাম থেকে একটি পোষা হাতি আনা হয় বুনোহাতিটিকে কাছে টানার জন্য। কিন্তু তাতেও কোন
সুফল হয় নি। এছাড়া ৪ আগস্ট দুপুরে আসাম রাজ্য বন বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও হাতি বিশেষজ্ঞ রিতেশ
ভট্টাচার্য্যরে নেতৃত্বে তিন সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল এসে হাতি উদ্ধারে কাজ শুরু করে। কিন্তু ভারতীয়
প্রতিনিধি দল ব্যর্থ হয়ে ৭ আগস্ট বাংলাদেশ ত্যাগ করে। বাংলাদেশ ত্যাগকালে ভারতীয় টিম প্রধান রিতেশ
ভট্টাচার্য্য জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খানের সাথে এক মত বিনিময় সভায় জানান, হাতিটি ভারতের সম্পদ হলেও
উদ্ধার হলে এটি বাংলাদেশকে প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের উদ্ধার পদ্ধতি প্রশংসনীয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, গত ২৮ জুন উজানের ঢল ও বন্যার পানিতে ভারতীয় একটি বুনো হাতি বাংলাদেশের সীমান্তের
কুড়িগ্রামে আসে। পরে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ঘুরে ২৮
জুলাই মধ্যরাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চরা লে এসে বন্যার পানিতে অবস্থান নেয়। পরে ৩০ জুলাই
ঢাকা বিভাগীয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক বাবু অসিম মল্লিকের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি
প্রতিনিধি দল ওই হাতি উদ্ধারে সরিষাবাড়ীতে আসে। দেশীয় প্রযুক্তিতে হাতিটি উদ্ধারে সক্ষম না হওয়ায় ভারত
সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে ভারতীয় প্রতিনিধি দল এসে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা মিলে উদ্ধার প্রক্রিয়া
শুরু করলেও এখনো তা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।