বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ- নয় জেলায় রোববার বজ্রপাতে নারী-শিশুসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন মারা গেছেন। এ ছাড়া মাগুরায় ভ্যানচালকসহ চারজন, নোয়াখালীতে স্কুলছাত্র ও শ্রমিক, রাঙামাটি ও নওগাঁয় দুই গৃহবধূ, সুনামগঞ্জে কৃষক, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কারখানা শ্রমিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কৃষি শ্রমিক এবং ফরিদপুরের মধুখালীতে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সমকাল অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত:
সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর: সকালে কাজীপুরের ডিগ্রি তেকানী চরে ছেলেকে নিয়ে বাদাম তুলছিলেন শামছুল মণ্ডল। এ সময় বজ্রপাতে তারা ঝলসে যান। উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়। একই সময় কামারখন্দ উপজেলার পেস্তককুড়া গ্রামের ধানক্ষেতে বজ্রপাতে কৃষক কাদের হোসেনের মৃত্যু হয়েছে।
দুপুরে শাহজাদপুর থানা ভবনের পাশে বজ্রপাতে পৌর সদরের ছয়আনিপাড়া গ্রামের ফারুক হাসানের ছেলে নাবিল (১৭) ও একই এলাকার রাশেদুল ইসলামের ছেলে পলিন (১৭) আহত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া সকালে পৌর সদরের নলুয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাব্বির (১৩) বজ্রপাতে আহত হলে তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে এবং পরে সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেহেলী লায়লা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ হাসিব নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন।
মাগুরা: সদরের অক্কুরপাড়ায় বজ্রপাতে নিহতের নাম শামীম। দুর্ঘটনার সময় তিনি ভ্যান চালিয়ে মাগুরা থেকে শ্রীপুর যাচ্ছিলেন। সদরের রায়গ্রামে বজ্রপাতে নিহত অন্য ব্যক্তির নাম আলম। তিনি সদর উপজেলার আবদুর রশিদের ছেলে। মাগুরা থেকে বাড়ি ফেরার সময় তিনি বজ্রপাতের শিকার হন। অন্যদিকে শালিখা উপজেলার বুনাগাতীতে মোবাইল ফোনের টাওয়ারে কাজ করার সময় মেহেদী নামে এক যুবক বজ্রপাতের শিকার হন। পরে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জয়পুরহাটের মনপুরা এলাকার আলম মিয়ার ছেলে। বজ্রপাতে নিহত আরেকজন হলেন শালিখার বাকলবাড়িয়া গ্রামের শক্তিপদ বিশ্বাসের ছেলে প্রল্লাদ বিশ্বাস। তিনি ধানক্ষেতে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন।
নোয়াখালী (উত্তর) ও সেনবাগ: জেলা শহর মাইজদীতে সহপাঠীদের সঙ্গে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বশিরার দোকানের পার্শ্ববর্তী মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে নোয়াখালী জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র পিয়ালের (১৩) মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার বাবা সোহেল রানা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
অন্যদিকে কাজের জন্য ভোলা থেকে নোয়াখালী আসেন মো. শাহিন আলম (২৫) নামের এক শ্রমিক। ধানক্ষেতে কর্মরত অবস্থায় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। আহত হন আব্বাস উদ্দিন ও মনির হোসেন নামের অন্য দুই শ্রমিক। সকালে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শাহিন ভোলার তমিজ উদ্দিনের সোনাপুর গ্রামের রজন মিয়ার ছেলে।
রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ি: বাঘাইছড়ির মারিশ্যা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক এলাকায় বজ্রপাতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বাসায় দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন। নিহতের নাম মানসুরা বেগম (৩৮)। তিনি ওসিমের স্ত্রী।
নওগাঁ: সকালে সাপাহারের শিমুলডাঙ্গার রামশ্রম গ্রামে রুবেল হোসেনের স্ত্রী বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় রুবেল হোসেন, বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া কল্যাণপুর গ্রামের সালেহা বিবি ও শিশু রাজু আহত হয়। এ ছাড়া পত্নীতলায় নরটুলী গ্রামের আশরাফ আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম, রুহুল আমিনের স্ত্রী লায়লা বানু ও ঘোষনগর খারিপাড়ার হানিফ হোসেনের স্ত্রী পিঞ্চিরা বেগম বজ্রপাতে আহত হন।
সুনামগঞ্জ: সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের পাশের বোরো জমিতে সকালে যান কৃষক লিটন মিয়া। এ সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): উপজেলার মাটিকাটা এলাকায় সকালে বজ্রপাতে জাফরুল ইসলাম (২০) নামে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। জাফরুল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার হরিনাথপুর এলাকার মো. আব্বাছ আলীর ছেলে। তিনি ইনক্রেডিবল ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার চেকম্যান পদে কর্মরত ছিলেন। একই ঘটনায় আহতরা হলেন- ওই কারখানার শ্রমিক সৌরভ, মনি সামান্ত, লতা, আলেয়া ও তাপসি।
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলামের জমিতে ধান কাটতে যান আবদুর রহিমসহ চার শ্রমিক। এ সময় বজ্রবৃষ্টি হলে রহিম অচেতন হয়ে পড়েন, আহত হন আরও একজন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি শ্রীমঙ্গল। আহত শ্রমিকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালীর মেগচামী ইউনিয়নের বামুন্দি বালিয়াকান্দির তেগরপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে শান্তি রাম বিশ্বাসের ছেলে কৃষক সাধন কুমার বিশ্বাসের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার ছোট ভাই সঞ্জিত কুমার বিশ্বাস। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার আবদুস সালাম মোল্যা জানান, দুই ভাই কৃষি কাজ করে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতের শিকার হন।