অনলাইন ডেস্কঃ-
শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের খণ্ডিত লাশ পাওয়া গেছে ঢাকার খিলগাঁও বাগিচা এলাকায় রেল লাইনের পাশে। তিনি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধারণা করলেও তার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি।
ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদ (৫৭) যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
বিচারে যুক্তরাজ্যে পলাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আশরাফুজ্জামান উভয়কেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
রেল পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায় হিকমাহ আই হসপিটালের পাশে সুমন জাহিদের লাশ পাওয়া যায়। তিনি ট্রেনের নিচে পড়ে মারা গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
কমলাপুর জিআরপি থানার ওসি ইয়াসিন মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আমরা সকাল ১০টার দিকে খবর পেয়ে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠাই।’
কী কারণে সুমন জাহিদের মৃত্যু ঘটেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি রেল পুলিশের ওসি।
ঘটনাস্থলে শাহজাহানপুর থানা থেকেও পুলিশ গিয়েছিল।
শাহজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল মামুদ জানান, তারা গিয়ে খণ্ডিত লাশ দেখেন। তার মাথা থেকে দেহ বিচ্ছিন্ন ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘কয়েকজন বলেছেন, ওই ব্যক্তি রেল লাইন পার হওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এরপরেই কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন তার শরীরের উপর দিয়ে চলে যায়।’
ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি একটি দুর্ঘটনা। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
নিহতের শ্যালক কাজী সারোয়ার জানান, শাহজাহানপুরে সুমন জাহিদের বাসা। স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে থাকতেন তিনি। যেখানে তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল, বাসা থেকে হেঁটে সেখানে যেতে ৮/১০ মিনিট লাগে।
সুমন জাহিদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, সে বিষয়ে দ্রুত তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইয়ের লাশ একইরকমভাবে সড়কের ধারে পাওয়া গিয়েছিল। সেটা হত্যাকাণ্ড ছিল বলে মনে করেন বুলবুল।
সুমন জাহিদ ফারমার্স ব্যাংকে চাকরি করতেন। চার মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন বলে তার শ্যালক জানান।
১৯৬১ সালে ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন সুমন জাহিদ। ব্যাংকার হিসেবে কাজ শুরুর আগে তিনি কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন।
১৯৭১ সালে তার মা সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে ধরে নিয়ে যায় আল বদর বাহিনী। পরে ১৮ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। নিউ সার্কুলার রোডের বাড়ি থেকে মাকে নিয়ে যখন ধরে নিয়ে যায়, ছোট্ট সুমন তখন বাড়ির ছাদে খেলছিল।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বার্তায় বলা হয়, ‘শৈশবে মাকে হারিয়ে সুমন অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টের ভেতর নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন।’
সুমনের অকাল মৃত্যুতে তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে নির্মূল কমিটি।
নির্মূল কমিটির পক্ষে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক অজয় রায়, সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, অধ্যাপক পান্না কায়সার, স্থপতি রবিউল হুসাইন, লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ।