মোঃ রেজাউল ইসলাম, সংবাদদাতা ঃ
গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। ঈদের আগে ঘরে ফেরার মতো এবার ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতেও পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বাড়তি ভাড়া আর পরিবহনের সংকটের জন্য যাত্রীদের এখন তাহিতাহি অবস্থা। অর্থাৎ বাড়ি ফিরতে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয় ঠিক একইভাবে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতেও সেই একই রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। গত রোববার সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। বাস লঞ্চ বা ট্রেন সব টার্মিলানেই ছিল ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়। সোমবার রাজধানীর কয়েকটি বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানীবাসী কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে যাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি।
তিন দিন সরকারি ছুটির পর গতকাল সোমবার খুলেছে সব সরকারি অফিস। এছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও খুলেছে গতকাল সোমবার। ফলে কয়েক দিন ধরে ফাঁকা ঢাকা প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। তবে এখনও ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা। ছুটি শেষে গাবতলী বাস স্টেশনে দূর-দূরান্ত থেকে ফিরছে নগরবাসী। মহাখালী বাস স্টেশনেও একই চিত্র। এদিকে নৌ পথেও ঢাকা ফিরতে শুরু করা যাত্রীর সংখ্যা এখনো খুব বেশি নয়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদের ছুটি শেষ করে ফিরছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
কমলাপুর রেল স্টেশনেও গাদাগাদি ভিড়। ফেরার পথে নির্দিষ্ট স্টেশন থেকে সময়মত ট্রেন ছাড়েনি বলেও জানান যাত্রীরা। এছাড়া কমলাপুর স্টেশন থেকেও সময়মত ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে না । সরকারি ছুটি তিনদিন থাকায় গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে অফিস। আর নিজ কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশে রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন কর্মব্যস্ত মানুষেরা। তবে ছুটি শেষে গতকাল সোমবার ছিল প্রথম কর্মদিবসে অফিসগুলোতে উপস্থিতি কম। ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে অফিসগুলোতে চলছে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়। একে অপরকে দেখা মাত্রই বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন। ভেদাভেদ নেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও।
এদিকে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীর সদরঘাটে। ঈদের বাড়তি ছুটি শেষ হওয়ায় গতকাল সোমবার অফিস করার জন্য লঞ্চে রাজধানীতে ফিরেছে শত শত মানুষ। গতকাল সোমবার সকালে যাত্রী নিয়ে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ঘাটে ভিড়েছে। প্রতিটি লঞ্চই ছিল যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ। এদিকে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপে লঞ্চ টার্মিনালের আশেপাশের এলাকায় ছোটোখাটো যানজটের সৃষ্টি হয়।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ নদীপথে যাতায়াত করেন। আর নদীপথে রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম পথ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। টার্মিনালে এখন ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রী নিয়ে আসা প্রতিটি লঞ্চ ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। বিআইডব্লিউটিআই’র সূত্রে জানা যায়,গতকাল সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৪০টির মতো লঞ্চ ঘাটে এসেছে। গতকালের চেয়ে আজকে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি বাড়বে বলেও তিনি জানান।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকায় ফেরা মানুষের পদচারণায় মুখর রেলওয়ের প্রধান এ স্টেশনটি। পরিবার-পরিজনসহ মানুষ জীবিকার তাগিদে ফিরে আসছেন ঢাকায়। এদিকে সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালেও ঢাকামুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। একই দৃশ্য সদরঘাট লঞ্চঘাটেও। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সদরঘাটে পৌঁছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার লঞ্চ। ঢাকামুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় এখন থেকে ক্রমেই বাড়বে বলে জানিয়েছেন টার্মিলান সংশ্লিষ্টরা। গতকাল নগরীর বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত প্রতিটি টার্মিনালেই বাড়ছে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে আসছে তারা। ফাঁকা রাজধানী ক্রমেই এখন হয়ে উঠছে আবার কর্মচঞ্চল।
এখন থেকে স্বরূপে ফেরা শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। গতকাল বিকেলের পর থেকে বিশেষ করে সন্ধ্যায় ও রাতে অনেকেই ঢাকায় চলে এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু করে দিনভরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগের রাতে ও দিনের বিভিন্ন সময়ে ছেড়ে আসা ট্রেনে করে মানুষকে নামতে দেখা যায় রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে।
যদিও গত ১৬ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে থেকেই ফাঁকা হতে থাকে ঢাকা। নানা দুর্ভোগ সত্ত্বেও মানুষ বাড়ি ফেরে নাড়ির টানে। এদিকে ঈদের পরে যারা ঢাকায় ফিরে আসছেন তাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে যেমন বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে ঈদের পর দিন থেকে ঢাকায় ফিরতেও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখনো বেশিরভাগ রাজধানীতে আসেননি। তবে জীবন আর জীবিকার তাগিদে নিম্নআয়ের লোকজন ঢাকামুখো হচ্ছেন। ঈদের ছুটি শেষে গত সোমবার থেকেই ট্রেন, বাস ও লঞ্চে ছিলো ঢাকামুখী যাত্রীদের বাড়তি চাপ। অবশ্য প্রতি ঈদের ছুটিতেই শেকড়ের টানে যারা বাড়ি যান, তারা ঢাকা ফিরে আসেন সাধারণত ঈদের ছুটির শেষে দু’একদিনের মধ্যেই।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে গত শুক্র, শনি ও রোববার (১৫, ১৬, ১৭ জুন) সরকারি ছুটি ছিল।