স্পোর্টস ডেস্কঃ-
রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের ৪৮ ম্যাচের ৩২টি মাঠে গড়িয়েছে। রোববার পর্যন্ত সব দলেরই দুটি করে খেলা হয়ে গেছে। পয়েন্ট টেবিলের উত্তেজনাটাও জমে উঠেছে এরইমধ্যে।
আট গ্রুপের অর্ধেকেই চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপের পাশাপাশি পরের পর্বের দল ঠিক হবে শেষ ম্যাচে এসে। তার আগে দেখে নেয়া যাক দলগুলো কি অবস্থায় থেকে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে নামবে-
গ্রুপ এ: রাশিয়া, উরুগুয়ে, মিশর, সৌদি আরব
ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে সবার আগে নক আউটের টিকিট নিশ্চিত করেছে রাশিয়া। দুই ম্যাচেই জয় তাদের, পয়েন্ট ৬। সমান ম্যাচে সমান জয় আর পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করেছে উরুগুয়েও। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে চেরিশেভ-কাভানির দল, ২৫ মার্চ রাত ৮টার লড়াইয়ে ঠিক হবে গ্রুপের এক-দুই। সেখানে একইদিনে একই সময়ে মিশর ও সৌদি আরব লড়বে সান্ত্বনার জয়ের জন্য। ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে এ দুদলের।
গ্রুপ বি: স্পেন, পর্তুগাল, ইরান, মরক্কো
দুটি করে ম্যাচ খেলে সমান ৪ পয়েন্ট করে নিয়ে এই গ্রুপ থেকে গোলপার্থক্যে এগিয়ে স্পেন, দুইয়ে পর্তুগাল। রোনালদোর দল শেষ ম্যাচে খেলবে ৩ পয়েন্ট থাকা ইরানের বিপক্ষে। শক্তির বিচারে পিছিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে জিততে হবে পর্তুগিজদের, ড্র করলেও চলবে, হারলে ছিটকে যাবে। স্পেন সেখানে ২৫ জুন একই সময় রাত ১২টায় মরক্কোর বিপক্ষে নামবে।
স্পেন-পর্তুগাল দুই জায়ান্টই যদি জেতে, তখন সমান পয়েন্ট হওয়ায় গোলপার্থক্যে নির্ধারিত হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ। মরক্কোর ইতোমধ্যেই বাড়ির টিকিট কেটে ফেলেছে! কিন্তু শেষ আঘাতে যদি স্পেনকে হারিয়ে যায়, তবে পর্তুগালের সঙ্গী হয়ে পরের রাউন্ডে যেতে পারে ইরানও। সেক্ষেত্রে ইরানকে ড্র করতে হবে পর্তুগালের সঙ্গে। সেই ড্রও করতে হবে অনেক বড় গোলসংখ্যা নিয়েই। আর স্পেন ড্র করলেও, পর্তুগালের জয় বা ড্র শীর্ষ দুইয়ে প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু স্পেনের জয় বা ড্রয়ের পিঠে পর্তুগাল হেরে বসলে সোজা বাড়ির পথ ধরতে হবে রোনালোদের।
গ্রুপ সি: ফ্রান্স, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, পেরু
টানা দুই জয়ে হট-ফেভারিট ফ্রান্স নক আউটের টিকিট কেটে ফেলেছে। দুইয়ে থাকা ডেনমার্কের একটি করে জয়-ড্রয়ে পয়েন্ট ৪। ২৬ তারিখ রাত ৮টায় ডেনমার্ক ও ফ্রান্স মুখোমুখি হবে, তাতে জয়-ড্র গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপে প্রভাব ফেলবে। হারলে ডেনমার্ক একটু ঝুঁকিতে থাকবে। কেননা একইদিনে একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া-পেরু লড়বে সোচিতে। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে ৪ পয়েন্ট হবে ঝুলিতে, যা ডেনমার্কের সমান। তখন সামনে আসবে গোলপার্থক্য। পেরুর সেখানে সান্ত্বনার জয় খোঁজা ছাড়া কোনো আশা নেই।
গ্রুপ ডি: ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, আইসল্যান্ড, আর্জেন্টিনা
সমীকরণ জটিলতায় শীর্ষে এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথ। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রা গ্রুপপর্বেই সমাপ্তির শঙ্কা জাগানো আর্জেন্টিনার সামনের সমীকরণে অক্সিজেন দিয়েছে নাইজেরিয়ার জয়। পরের রাউন্ডে যেতে শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষেই জয়ের বিকল্প নেই মেসিদের। সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপসঙ্গীদের ম্যাচেও।
এই গ্রুপের তিন দলেরই দ্বিতীয় রাউন্ডের সম্ভাবনা বেঁচে আছে। কেবল ক্রোয়েশিয়া নক আউট নিশ্চিত করেছে, পয়েন্ট ৬। নাইজেরিয়ার পয়েন্ট দুই ম্যাচে এক জয়ে ৩। আর্জেন্টিনার এক হার ও এক ড্রয়ে পয়েন্ট ১। সমান ম্যাচে আইসল্যান্ডের অবস্থাও একই।
গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ২৬ জুন নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পরীক্ষা আর্জেন্টিনার। একইদিনে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ আইসল্যান্ড। সেদিন মেসিদের হারালেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত সুপার ঈগলদের। ড্র করলেও সম্ভাবনা থাকবে। সেক্ষেত্রে চেয়ে থাকতে হবে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচে।
তখন আইসল্যান্ড ড্র কিংবা হারলেই পরের রাউন্ডের টিকিট কাটা হয়ে যাবে আফ্রিকান জায়ান্টদের। আর আইসল্যান্ড জিতলে এবং নাইজেরিয়া ড্র করলে তখন দুদলের পয়েন্টই হবে ৪ করে। সামনে আসবে গোল পার্থক্যের হিসাব। সেখানে আর্জেন্টিনার হিসাবটা খোলামেলা। মেসিরা যদি নাইজেরিয়াকে হারাতেই পারে, অন্য ম্যাচে আইসল্যান্ড হারলেই নকআউটে যাবে আর্জেন্টিনা। সেখানে আইসল্যান্ডও ড্র করলে গোলের হিসাব আসবে সামনে, তাতে মেসিদের জিততে হবে বড় ব্যবধানেই।
গ্রুপ ই: ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া, কোস্টারিকা
পয়েন্টের খেলা জমেছে এই গ্রুপেও। হট-ফেভারিট ব্রাজিল এক জয়-ড্র নিয়ে ৪ পয়েন্টে শীর্ষেই আছে। সমান পয়েন্টে দুইয়ে সুইজারল্যান্ড। তিনে এক জয়-হারে ৩ পয়েন্টের সার্বিয়া। কেবল কোস্টারিকাই বাড়ির পথ ধরার বন্দোবস্ত করেছে। তবে বাকিরাও স্বস্তিতে নেই। ২৭ জুন রাত ১২টায় সার্বিয়ার বিপক্ষে নামবে ব্রাজিল। একই সময়ে লড়বে সুইজারল্যান্ড-কোস্টারিকা।
ব্রাজিল যেভাবে খেলছে তাতে সার্বিয়ার পাত্তা পাওয়ারই কথা না! কিন্তু পা হড়কালে বিপদ। হারলে বাড়ি ফেরার টিকিট কাটতে হতে পারে, ড্র করলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপের ব্যাপার থাকবে। সার্বিয়া সেখানে বাজি জিততে পারলে নক আউটে। আর সুইসদের অবস্থা জিতলে-ড্র করলে তো হলই, হারলেও সুযোগ থাকবে। সেক্ষেত্রে ব্রাজিল ম্যাচের ফল হবে নিয়ামক। ব্রাজিল জিতলে তো সারাই, ড্র করলে গোলপার্থক্যের হিসাবে সুইজারল্যান্ড-সার্বিয়ার এক দল দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট কাটবে।
গ্রুপ এফ: মেক্সিকো, জার্মানি, সুইডেন, সাউথ কোরিয়া
টানা দুই হারে সাউথ কোরিয়া যেমন ফিরতি টিকিট কেটে ফেলেছে। টানা দুই জয়ে তেমনি মেক্সিকো ৬ পয়েন্টে পরের রাউন্ডের পথে এগিয়ে। তবে এই গ্রুপের সমীকরণেও থাকছে ওলট-পালট হওয়ার সুযোগ। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি হেরে শুরু করে জয়ে মোড় ঘুরিয়ে হিসাব জমিয়ে তুলেছে, তাদের পয়েন্ট ৩। সমান পয়েন্ট সুইডেনেরও। ২৭ জুন রাত ৮টায় কোরিয়া-জার্মানি মুখোমুখি হবে, একই সময়ে নামবে মেক্সিকো সুইডেনও।
মেক্সিকো জিতলে তো কথাই নেই, ড্র করলেও চলবে। তবে সুইডেনের জিততেই হবে, আর জিতলে জমে উঠবে খেলা। তখন সুইডিশদের পয়েন্ট হবে ৬। জার্মানিরও জয়ের বিকল্প নেই। সাউথ কোরিয়াকে হারালে তাদের পয়েন্টও হবে ৬। তখন গোলপার্থক্য, হেড-টু-হেড, ফেয়ার প্লের বিষয় সামনে আসবে। আর জার্মানি ও সুইডেন যদি নিজ নিজ ম্যাচে ড্র করে, তখন দুদলেরই ৪ পয়েন্ট করে হবে। সেক্ষেত্রেও পরের হিসাব-কেতাবে নজর দিতে হবে। তবে এই দুই দলের যদি ভিন্ন ফলাফল আস, তাতে মেক্সিকোর সঙ্গী হবে ইতিবাচক বা জয়ে মাঠ ছাড়া দলটিই।
গ্রুপ জি: ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, তিউনিসিয়া, পানামা
ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম দুটি করে ম্যাচ খেলে প্রত্যাশিত ফল এনেছে। ৬ পয়েন্ট করে অর্জনের পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে গোলবন্যাতেও ভাসিয়েছে দল দুটি। তাতে পরের রাউন্ডের টিকিট কাটা হয়ে গেছে। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ২৮ জুন রাত ১২টায় নিয়মরক্ষার ম্যাচে নামবে প্রথম জয়ের খোঁজে থাকা পানামা-তিউনিসিয়া। একই সময়ে এই গ্রুপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড-বেলজিয়াম। ওই ম্যাচের ফলই নির্ধারণ করে দেবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ। একদল জিতলে তো হলই, ড্রয়ে গোলপার্থক্য বিবেচনায় আসবে।
গ্রুপ এইচ: জাপান, সেনেগাল, কলম্বিয়া, পোল্যান্ড
পোল্যান্ড টানা দুই হারে বাড়ি ফেরায় অপেক্ষায়। তার আগে সুযোগ থাকছে গ্রুপের হিসাব-কেতাবে ওলট-পালট করার। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট করে নিয়ে শীর্ষে জাপান, দুইয়ে আছে সেনেগাল। ৩ পয়েন্টে সেখানে কলম্বিয়া তিনে। তিন দলেরই আছে পরের রাউন্ডের সুযোগ। ২৮ জুন রাত ৮টায় জাপানের পোল্যান্ড পরীক্ষা। একই সময়ে সেনেগাল ও কলম্বিয়ার মহারণ।
জাপান জিতে গেলে সোজা পরের রাউন্ডে। ড্র করলেও নক আউটে যেতে পারবে। সেক্ষেত্রে সেনেগালকেও করতে হবে ড্র, অথবা হারতে হবে। আর সেনেগাল জিতলেও একই, সোজা দ্বিতীয় রাউন্ডে। কিন্তু কলম্বিয়া তাদের হারালে সবার আগে পরের রাউন্ডে যাবে। সেনেগালের তখনও হতাশ হওয়ার কিছু থাকবে না, শুধু জাপানের পরাজয় প্রার্থনা করতে হবে। তেমন হলে দুদলের পয়েন্ট ৪ করেই থাকবে। তখন গোলপার্থক্য বা ক্রমে অন্য পরিমাপকগুলো সামনে আসবে। এই গ্রুপেও তাই চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ ঠিক হবে একেবারে ম্যাচের শেষ অঙ্কেই।