সোহেল রানা,হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
উন্নত জাতের ব্যাগিং করা আম রপ্তানি হয়নি বিদেশে আমের উৎপাদন খরচ উঠছে না
আগ্রহ হারাচ্ছে ফল চাষীরা। চলতি বছরের শুরু থেকে আমের জন্য অনুকূল আবহাওয়া
বিরাজ করায় এ বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারগুলোতে ব্যাপক আমের
আমদানি হওয়ায় কেনাবেচায় ধস নেমেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থাানীয়
আমবাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
চলতি মৌসুমে আম বিদেশে রফতানির লক্ষ্যে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার
মাহমুদপুর ফলচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের বাগানিরা আম বাগানের নিবিড়
পরিচর্যা শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি অধিফতরের সহায়তায় বিষমুক্ত ও রফতানীযোগ্য
আম উৎপাদনের জন্য তারা মনোসেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহারের
করেছে। ইতি পৃর্বে বাগানিরা এর ওপর প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আম চাষে জেলার সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা
মাহমুদপুর ইউনিয়ন। আমের ভাল ফলন হওয়ায় ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই শত শত
বিঘাতে আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষি জমিতে ধান, গম, সরিষা, আলুর
সাথে সাথী ফসল হিসেবে উন্নতমানের হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, বোম্বাই
প্রজাতির আম চাষ হয় এবং চলতি বছরে ফলনও আশানুরূপ হয়েছে।
মাহমুদপুর ফল সমবায় সমিতি লি.-এর সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান,
এ এলাকার আম গুণগতমান ভালো। এখানকার আম বিদেশে রপ্তানিকল্পে উপজেলা কৃষি
অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মানসম্মত আম উৎপানের জন্য গেল বছর
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্র থেকে গবেষকদের নিয়ে এসে আম চাষিদের
প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে ও রোগ বালাই না থাকায় এবং
রফতানিতে প্রক্রিয়ায় সহায়তা পেলে এ বছর নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে ১০০ মে: টন
উন্নত জাতের আম বিদেশে রফতানি করার লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান জানান-
উপজেলাতে প্রায় ৮০৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ করা হয়েছে। এ বছর উপজেলাতে ৫০
হাজার মে. টন আম উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস
থেকে আম উৎপাদনে চাষিদের সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নতুন ও পুরাতন মিলে এ
বছর প্রায় ৮০৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৫
হেক্টর বেশি। গত মৌসুমে আমের উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার
মেঃ টন এবং বর্তমানে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫০হাজার মে. টন আম। এ বছর
বেশিরভাগ বাগানে আম দেখা দেয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় লক্ষ্য মাত্রা
নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেঃ টন আম। এতে চলতি বছর এ অঞ্চলের
আমবাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকা লোকসান হবে বলে ধারণা করা
হচ্ছে। আমের দাম কম থাকায় আগামী বছরের জন্য নতুন করে আমবাগান কেনাবেচাও
হচ্ছে না। বিগত বছরগুলোতে বেশি লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও বাগান
মালিক মৌসুম শুরুর আগেই অপরিপক্ব আম ভাঙ্গা শুরু করত। পরে তারা ওই আমের রং
ভালো করতে বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার করত। যার কারণে সরকার আম
বাজারজাতকরণে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর এ কারণে একসঙ্গে সবাই আম
ভাঙার কারণে আমের বাজারে ধস নেমেছে।
আম বাগান মালিক মোঃ রফিকুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান, মোকলেছার রহমান,
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বছরের প্রথম থেকে আমের বাজারে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া
উৎপাদনের চেয়ে বাজারে আমের চাহিদা অনেক কম। যার ফলে আমের দাম বিগত
বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম হয়েছে। আমের ব্যাপক দরপতন হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে এ
বছর আম ব্যবসায়ী ও চাষীদের কয়েক কোটি টাকা লোকসান হবে। উল্লেখ্য দেশের
তৃতীয় মাহমুদপুর ফল সমবায় সমিতি লি.। উত্তর জনপদের আম চাষের উর্বর ভূমি ৮নং
মাহমুদপুর ইউনিয়ন। যেদিকেই চোখ যাবে কৃষি তিন ফসলি জমিতে চোখে পড়বে
ছোট বড় উন্নত প্রজাতির আম বাগান। গাছে গাছে কাঁচাপাকা ঝুলে আছে
হাজার হাজার মণ আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে বিদেশে
রপ্তানি করার জন্য চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দুই বছর ধরে বাড়তি টাকা খরচ করে আম
উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকা চাষীরা ব্যাগিং করে থাকে। ব্যাগিং করা আম দেখতে
সুন্দর ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। কিন্তু বিধিবাম। ব্যাগিং করা আম স্থাানীয় বাজারেই
পানির দরে বিক্রি করছে ফলচাষীরা।
পাচটি বাগানের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছরে
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় তার প্রতিটি বাগানে ফলনও হয়েছে প্রচুর। গত বছর যে
বাগান ৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এ বছর সে বাগান দেড় লাখ টাকায়ও বিক্রি করা
সম্ভব হচ্ছে না। তবে কৃষকেরা জানায়, রমজান মাসে আমের চাহিদা তেমন ছিলনা।
ঈদের পরেই হয়তো চাহিদা বাড়বে এবং তারা ন্যায্যমূল্য পাবে। এখনো ৮০ টাকা
কেজি আম ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।