বাংলার প্রতিদিন ঃ
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান সরকারের বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। যত কূটকৌশলই অবলম্বন করুন না কেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই দিতে হবে।
আজ শুক্রবার বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতেই প্রহসনের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ। শেখ হাসিনার নির্দেশেই খালেদা জিয়াকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে, এটি জনগণের বুঝতে বাকি নেই।’
রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে এটা করা হয়েছে। কিন্তু আমি সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, এভাবে নির্যাতন করে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
‘কেন্দ্র দখল করে সিল মারার দৃশ্য ভাইরাল’
গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের নির্বাচনের প্রচলিত সংস্কৃতিকে কলুষিত করে শেখ হাসিনার গণতন্ত্রবিনাশী ভোট ডাকাতির সর্বশেষ মডেলের নির্বাচন গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি সহায়তায় আওয়ামী লীগ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেকটি প্রতারণার নির্বাচন উপহার দিল। এই নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও দেশ-বিদেশে এটি কলঙ্কিত নির্বাচনের আরেকটি ইতিহাস হয়ে রয়ে গেল।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ভোটকেন্দ্র দখল করে সিল মারার দৃশ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। অথচ নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হওয়ার ‘সার্টিফিকেট’ দিয়ে ভোট ডাকাতিকেই প্রশ্রয় দিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে গাজীপুর ও খুলনাতে যে নাটক মঞ্চস্থ করল, তাতে ভবিষ্যতে ভোটাররা আগামী যেকোনো নির্বাচনের ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।”
রিজভী আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে, গাজীপুরে প্রায় সব কেন্দ্র দখল করে জাল ভোটের মহোৎসব চলেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে গাজীপুরে ভোটের দিনেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ও ভোটার সমর্থকদের গণগ্রেপ্তার চলেছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে, তাদের মারধর করে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যারা তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছে, সেসব এজেন্টকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে।’
‘খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ, এটি সুস্পষ্ট’
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ থাকায় গতকালও তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়নি। খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কারণে কারা চিকিৎসকরা তাঁকে আদালতে হাজির না করার পরামর্শ দেয়। সে জন্য পুলিশ তাঁকে হাজির করেনি, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যে প্রচণ্ড অসুস্থ, এটি সুস্পষ্ট। এরপরও এখন তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘বারবার দেশনেত্রীকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জোর দাবি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা দেখে যেসব সুপারিশ করেছেন, সেসব বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কারাবিধির ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে বাধার সৃষ্টি করছে। অথচ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতারা কারাগারে থাকাকালীন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বারবার।’