টি.আই সানি,গাজীপুরঃ
যেদিকে চোখ যায় শুধু কাঁঠাল আর কাঁঠাল। পাকা কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধ
চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ির উঠান, ঘরের বারান্দা সবখানেই ছড়াছড়ি।
হাটে-বাজারেও প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার কাঁঠাল। গাছ থেকে কেউ
পাড়ছে, কেউ খাচ্ছে, কেউবা বিক্রির জন্য হাটে-বাজারে নিয়ে যাচ্ছে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
কাঁঠাল দেশের সব এলাকায় কম-বেশি ফলে। সবচেয়ে বেশি হয় উঁচু লাল
মাটিতে। এ জন্য গাজীপুরকে বলা হয়ে থাকে কাঁঠালের রাজধানী। দেশের
সবচেয়ে বড় এ ফলের বাজারও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার। তবে
বাজারে দাম কম থাকায় বাগান মালিকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের
পাশে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারে বসে দেশের সর্ববৃহৎ
কাঁঠালের বাজার। বাজারে মৌসুমে প্রতিদিন দিনে রাতে বিক্রি হয় হাজার
হাজার কাঁঠাল।
সব সময়ই কাঁঠালের বেচাকেনা চলে। তবে জমজমাট থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা
পর্যন্ত। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন গাজীপুরের শ্রীপুরের
জৈনাবাজার হাটে। নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বাগান
থেকে বাজারে আনা, কেনাবেচা, গাড়িতে ওঠানো-নামানোসহ এ বাজারে
নানা কাজ করে শত শত লোক। জৈনাবাজারের আশপাশে অনেক কাঁঠালের বাগান
রয়েছে। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পাইকারদের থাকা-খাওয়ার
অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে জৈনাবাজার হয়ে উঠেছে কাঁঠালের
সবচেয়ে বড় বাজার।
শ্রীপুরের জৈনাবাজার,এমসি বাজার,নয়নপুর বাজার, মাওনা চৌরাস্ত, বাঘের
বাজার, বানিয়ারচালা, ভবানীপুর ও সিডস্টোর বাজারে ঢাকা-ময়মনসিংহ
মহাসড়ক ঘেঁষে বড় বড় কাঁঠালের বাজার বসছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতে
এরকম চিত্র চলে আষাঢ় মাসের শেষ পর্যন্ত। শ্রীপুর উপজেলার প্রায় সকল বাগান
মালিকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে
বাজারজাত করার জন্য বাগান মালিকদের পাশাপাশি বাড়ির নারীরা তাদের
সহযোগিতা করছেন।
বাগান মালিকেরা প্রতিদিন ভোরে বাগান থেকে পাকা কাঁঠাল সংগ্রহ করে
বিক্রির জন্য ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও ছোট ভাইরাজ গাড়িতে করে নিয়ে আসছেন
বাজারে। বর্তমানে এ অঞ্চলে চলছে কাঁঠালের ভরা মৌসুম। এলাকার ভ্যান ও
ঠেলাগাড়ি চালকরা এসময় শুধু কাঁঠাল আনা-নেয়ার কাজ করে থাকে। দুপুর
গড়িয়ে বিকাল হলেই দেখা যায় মহাসড়কের ওপর ট্রাকের বহর। লাইন ধরে বিভিন্ন
আড়তের সামনে থেকে ট্রাকে কাঁঠাল উঠছে। এখানকার উৎপাদিত কাঁঠাল
মিষ্টি, সুস্বাদু ও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে
রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা
ভালো থাকায় এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে বিক্রি করলে ভালো লাভ পাওয়া যায়।
গাজীপুর শহর থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছানো যায় শ্রীপুরের জৈনাবাজার
এলাকায়। জৈনাবাজার পৌঁছানোর কিছু আগে থেকেই যানজট। গাড়ি
থেকে নেমে হেঁটে সামনে গিয়ে চোখে পড়লো কাঁঠালের হাট। যানজটও
হয়েছে হাটের কারণেই। বাজার ছাড়িয়ে মহাসড়কের অর্ধেক জোড়েই বিশাল
কাঁঠালের হাট। ছোট ছোট ঠেলাগাড়িতে কাঁঠাল ভরে বাজারে নিয়ে
আসছেন। সড়কের পশ্চিম পাশে সারিবদ্ধভাবে ঠেলাগাড়ি, ট্রাক, রিকশায় করে
কাঁঠাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিক্রেতারা।
আড়তদাররা কিনে পাশেই স্তুপ করে রাখছেন। কৃষকরা কাঁঠাল নিয়ে বাজারে
আসছেন। বা¤পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না স্থানীয় কাঁঠাল
উৎপাদনকারীরা। শ্রীপুরের তেলিহাটি এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান,
তার বাড়িতে ৮০টি কাঁঠাল গাছ আছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও অনেক
কাঁঠাল ধরেছে। প্রতিবছর তিনি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি
করেন। তিনি ৩৮টি কাঁঠাল বাজারে নিয়ে এসে বিক্রি করেন ১ হাজার ৬০০
টাকা। জৈনাবাজার এলাকার সামছুল হক বলেন, এই সময়ে বাড়িতে তেমন
কোনো কাজ থাকে না। বাড়িতে ১২০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। প্রতিদিনই
কাঁঠাল নিয়ে বাজারে আসি। বিক্রি করে বাড়ির জন্য বাজারে নিয়ে যাই।
একই গ্রামের
ফিরোজ মিয়া বলেন, বাজারে ১৪টি কাঁঠাল ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে
দামটা ৮০০ টাকা হলে ভালো হতো। জৈনাবাজার হাটের ইজারাদার মো. আব্দুল
আজিজ ও জহির মিয়া জানান, এই বাজারে সিলেট, নোয়াখালি, কুমিল্লা,
চাঁদপুর, বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা আসেন।
প্রতিদিন ৫০-৬০টি ট্রাক ভর্তি করে কাঁঠাল চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
কাঁঠালপ্রতি ১ টাকা করে ইজারা নেয়া হয়। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা
বলেন, দেশের অধিকাংশ এলাকায় কাঁঠাল গাছ কম- বেশি দেখা গেলেও
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় এর চাষ বেশি। এখানে প্রায় ৯৫ ভাগ বাড়িতে
কাঁঠালের গাছ রয়েছে। এ মৌসুমে উপজেলার প্রায় শতকরা ৭০-৮০
ভাগ লোকের জীবিকার নতুন পথ সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার সর্বত্রই মৌসুমি
ফল কাঁঠাল কেনা-বেচার হাট জমে উঠেছে। শ্রীপুরে চলতি বছর ৩ হাজার ৭১০
হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়েছে। এছাড়া কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে ৭৪ হাজার ২
টন। বাগানীদের জন্য কৃষি বিপণন ব্যবস্থা ভালো করা হয়েছে