ফুলবাড়ী দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে ঠিকাদারী
প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া-ট্রেষ্ট কনসোর্টিয়াম
(জিটিসি) কর্তৃক পাথর উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার
পাশাপাশি পাথর বিক্রিও বেড়েছে। মধ্যপাড়ার অধিকাংশ পাথর
যাচ্ছে বর্তমানে দেশের নির্মাণাধীন মেগা প্রজেক্ট
রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন, রক্ষনাবেক্ষন ও পরিচালনার
দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি
খনি থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন
পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে
লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে যাচ্ছে লোকসানি
এই পাথর খনিটি।
জিটিসি সুত্রে জানাগেছে, চলতি মাস থেকে মাসিক
১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন
নিয়ে কাজ করছে। চলতি মাসের প্রথম দিনে এ খনিতে
পাথর উত্তোলন হয়েছে ৪ হাজার ৮শ’ মে.টন। গত জুন মাসে
৬২ হাজার ৫০ মেট্রিক টন পাথর বিক্রি থেকে মধ্যপাড়া
পাথর খনি কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি
টাকা।
খনি কর্তৃপক্ষ জানান, কয়েক দফা পাথরের দাম বাড়ানো
হলেও এর চাহিদা কমেনি। ট্রাকে পাথর পরিবহনে সরকার
নির্ধারিত লোড ক্যাপাসিটি করায় খনি থেকে
প্রতিদিন প্রায় ২০০থেকে ২৫০টি ট্রাকে এই পাথর
পরিবহণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে পাথর খনি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খনি
গেটের সামনে প্রধান সড়কে কয়েক শত ট্রাক পাথর
লোডের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কথা হয় পাথরের ডিলার
মোমিন সরকার, সিদ্দিক হোসেন,নুরে-আলমসহ তাদের
কয়েকজন প্রতিনিধির সাথে।
এ সময় তারা জানান, জিটিসি’র হাতে পাথরের উত্তোলন
বেড়ে যাওয়ায় পাথর বিক্রি বহুগুণ বেড়েছে। পাথর বিক্রি
বেড়ে যাওয়ায় খনি এলাকায় সংশি¬ষ্ট প্রায় ৫ শতাধিক
পরিবহন শ্রমিক, পাথর ক্রেতা, ডিলার ও প্রতিনিধিসহ
এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যে প্রানচাঞ্চল্য বিরাজ করছে।
মধ্যপাড়া লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি
সাদেকুল ইসলাম জানান,জিটিসি মধ্যপাড়া পাথর খনির
দায়িত্ব নেবার আগে এর ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে
পড়েছিল। খনি থেকে পাথর উৎপাদন কম হওয়ায় মধ্যপাড়ায়
পাথরের ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছিল। বন্ধ হতে বসেছিল এই
খনিটি। আমরা চাই যেকোন মুল্যে পাথর উৎপাদন বৃদ্ধির
বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকুক।
খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া-ট্রেষ্ট
কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)’র নির্বাহী পরিচালক
জাবেদ সিদ্দিকী জানান, পাথর খনি কর্তৃপক্ষের সাথে
চুক্তির বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে প্রায় ৬ মাস পর ২০১৪
সালের ২০ ফেব্রয়ারী খনির দায়িত্বভার গ্রহন করে ২৪
ফেব্রয়ারী খনি থেকে পাথর উৎপাদন শুরু করেন তারা।
জিটিসি পাথর উৎপাদন শুরু করে কয়েক মাসের মধ্যে
দ্বিতীয় শিফট চালু করে। প্রায় ৭ মাসের মাথায় খনির বহুল
আকাংখিত তিন শিফট চালু করে প্রতিদিন সাড়ে ৪
হাজার থেকে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন করে খনির পাথর
উৎপাদনের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড তৈরী করে।
জিটিসির এই কর্মকর্তা আরো জানান, পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ব মানের অত্যাধুনিক যন্ত্র এবং
যন্ত্রাংশ আমাদানী করে খনির ভুগর্ভে এসব যন্ত্রপাতি
প্রতিস্থাপন শেষে নতুন স্টোপ নির্মান করা হয়। গত বছরের
শেষের দিকে তারা পাথর উত্তোলন শুরু করে। প্রায় ৭০জন
বেলারুশের খনি বিশেষজ্ঞ, অর্ধশত দেশী প্রকৌশলী ও প্রায়
৭শ’ খনি শ্রমিক দিনে রাতে তিন শিফটে উৎপাদন ও খনি
উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত থেকে আধুনিক এইসব
মেশিনপত্র স্থাপনের ফলে দ্রুত গতিতে স্টোপ নির্মান সম্ভব
হয় এবং উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে বেড়ে যায় পাথর
বিক্রি।
পাথর খনির বর্তমান উৎপাদন ও বিক্রি বৃদ্ধির বিষয়ে
জানতে চাইলে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি
লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী
এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব জানান, বর্তমানে রুপপুর
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে
মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার হচ্ছে। দেশে নির্মাণাধীন মেগা
প্রকল্পগুলোতে মধ্যপাড়ার পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ
ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে খনিটি সরকারের লাভজনক
প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি
মনে করেন।