টি.আই সানি,গাজীপুরঃ
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা শিল্প-কারখানা সমৃদ্ধ তেলিহাটি
ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রাম। জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে উপজেলার
এক গ্রামটি সমৃদ্ধ। এই গ্রামকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে
কয়েকটি শিল্প-প্রতিষ্ঠান। আর এই শিল্প কারখানাই এখন তাদের আপদে
পরিণত হয়েছে। কারখানার ব্যবহার্য পানি নিচু কৃষি জমিতে
নিষ্কাশনের ফলে এলাকার প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ বিঘা জমি সারাবছরই
পানির নিচে ডুবে থাকছে এতে স্থানী কৃষকদের কৃষি কাজ ব্যহত
হচ্ছে। মুলাইদ গ্রামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কারখানায় কাজের
সুবাদে আসা প্রায় ৪০হাজার লোকের বসবাস। জনাকীর্ণ এই
গ্রামকে প্রায় ৬বছর যাবৎ বিভক্ত করে রেখেছে জলাবদ্ধতা। নিজাম উদ্দিন
বাড়ির মোড় হতে নাজিম উদ্দিন খলিফার বাড়ির সড়কটি সারাবছরই
জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। সড়কটি দক্ষিণ পাশে আলহাজ্ব শরাফত আলী
বায়তুল কোরআন নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং মুলাইদ উত্তর পাড়া
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘ সময়েও জলাবদ্ধতা নিরসন করে চলাচলের
উপযোগী না করায় স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, কারখানা শ্রমিক ও
স্থানীয়দের জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে ওই সড়কটি। জলাবদ্ধতার
নিমজ্জিত সড়কটির উপর প্রায় ১৫০ফুট একটি বাঁশের সাঁকো
স্থানীয়রা নির্মাণ করেছেন। আর এই বাঁশের সাঁকোই এখন ওই এলাকার
মানুষের একমাত্র ভরসা।
স্থানীয় শামসুল আলম জানান, এই সড়কটি ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায়
১০/১৫হাজার শিক্ষার্থী ও কারখানার শ্রমিকেরা চলাচল করে। এই সেতুতে
এক সাথে দুইজন পাশাপাশি পারাপার হতে পারে না। যখন কারখানা
ছুটি হয় তখন শ্রমিকদের এক পাশে দাঁড়িয়ে থেকে অন্য পাশের
লোকজনদের আসতে সুযোগ দিতে হয়। এতে এক সাথে অনেক লোক
বাঁশের সাঁকোতে উঠলে তা ভেঙ্গে পড়ে প্রাণহানির আশংকাও দেখা
দেয়। সড়কটিতে শুকনো মৌসুমে হাঁটু পানি থাকলেও বর্ষাকালে বুক
সমান পানি হয়। এতে এই সড়ক চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে
প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুড়ে চলাচল করতে হয়। পরে নিজ উদ্যোগে
জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত সড়কটির উপর একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ
করেছি।
তেলিহাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, ছয়-
সাত বছর আগেও আশপাশের কৃষি জমিতে স্থানীয় কৃষ ধান চাষ
করতো। পার্শ্ববর্তী নোমান গ্রুপের তালহা স্পিনিং মিলস্ধসঢ়;,
সাদসান টেক্সটাইল, প্যারাডাইস স্পিনিং কারখানায় ব্যবহার্য পানি ও
বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সড়কের উপর উপচে পরে। এতে
চল্লিশ-পঞ্চাশ বিঘা জমিতে এখন ফসল ফলানো যাচ্ছে না।
ভ্রাম্যমান চাটাই বিক্রেতা আলমগী জানান, আগে এই সড়কে চলাচল
করা খুব কষ্টকর ছিল। এখন বাঁশের সাঁকো তৈরী হওয়ায় চলাচলে কিছুটা
স্বস্তি পাওয়া যায়।
স্থানীয় আবুল কাশেম বলেন, সারা দেশের নাকি উন্নয়নের জোয়ার বইছে
আর আমরা উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছি। ভোটের সময় এলেই খালি তাদের
দেখা পাওয়া যায়। এতদিন ধরে এই সামান্যটুকু সমস্যা সমাধান করার
জন্য কোন জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি।
আলহাজ্ব শরাফত আলী বায়তুল কোরআন নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার
মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, মাদ্রাসার ছোট
ছোট কোমলমতী শিক্ষার্থীদের যাওয়া আসা সবচেয়ে অসুবিধা হয়।
বাঁশের সাঁকো পারাপারের সময় অভিভাবক অথবা মাদ্রাসার শিক্ষকরা
তাদের ওই বাঁশের সাঁকো পার করে দিতে হয়। অসাবধানতা বশত কোন
শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে গিয়ে যে কোন সময় প্রাণহানির মতো
ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি পুন
নির্মাণের দাবি জানান।
এব্যাপারে মুলাইদ উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং
কমিটির শফিকুল ইসলাম সরকার জানান, সাঁকোর পারাপারে বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এতে তো ঝুঁকি কাটানো সম্ভব
হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা থাকায় কৃষক তাঁর জমিতে ফসল ফলাতে পারছে না।
স্থানীয় কারখানা গুলোকে তিনি পানি নিষ্কাশনের বিকল্প পথ তৈরী করতে
অনুরোধ জানান।
এব্যাপারে তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মোবারক
হোসেন মুরাদ জানান, আশপাশের জায়গা পানির নিচে ডুবে থাকায়
মাটি পাওয়া যায়নি। তাই মেরামত করাও সম্ভব হয়নি।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আ: বাতেন সরকার বলেন,
বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যকে
সাথে নিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে খুব দ্রুতই সমস্যা থেকে উত্তরণে
চেষ্টা করবো।