অনলাইন ডেস্কঃ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে বাসে তোলার পরিবর্তে নদীতে ফেলে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন। তারা হত্যায় জড়িত হানিফ পরিবহনের বাসচালক, সহকারী (হেলপার) ও সুপারভাইজারের কঠোর শাস্তি চেয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল ও যুগ্ম আহ্বায়ক অন্তু মুজাহিদ বলেন, হানিফ পরিবহনের শ্রমিকরা যে আচরণ করেছে নিঃসন্দেহে এটা হত্যাকাণ্ড। এর কঠিন বিচার হওয়া প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের সন্ত্রাসীরা ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করতেও দ্বিধাবোধ করবে না।
তারা বলে, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি এদেশের গণপরিবহন এখন আর জনগণের পরিবহন নেই। এই সেক্টর স্বার্থবাদী লোক দখল করে নিয়েছে। যারা এখন সেবার পরিবর্তে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করছে। এরা এখন জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এদের কাছে দেশের মানুষ নিরাপদ নয়।
বিচার না হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া হচ্ছে দাবি করে যাত্রী অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েও কোনো ধরনের বিচারের সম্মুখীন না হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এরা এখন নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করতে শুরু করেছে। রাজীব, রোজিনার হত্যাকারীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে এটা হতো না।
বিবৃতিতে তারা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাইদুর রহমানকে হত্যা ও সড়কে সব হত্যাকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করাসহ গণপরিবহনব্যবস্থাকে জনবান্ধব করতে সরকারের পদক্ষেপ কামনা করে।
পায়েল হত্যা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর পঞ্চম সেমিস্টারের মেধাবী ছাত্র ছিলেন পায়েল। চট্টগ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে দুই বন্ধু শান্ত ও আদরের সঙ্গে হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসে চড়ে গত ২১ জুলাই শনিবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন পায়েল। ভোর ৪টার দিকে গজারিয়ার ভাটের চর ব্রিজের কাছে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে নামেন পায়েল। তখন বন্ধুরা ঘুমিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙার পর তাঁরা সুপারভাইজার মো. জনির কাছে পায়েলের কথা জানতে চান। পায়েল পরের বাসে আসবে বলে জানান বাসচালক, হেলপার ও সুপারভাইজার। পায়েলের পরিবারের সদস্যরা পরের দিন সকালে তাঁর সন্ধান না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জায়েদুল আলম জানান, ২৩ জুলাই সোমবার সকালে গজারিয়ার ফুলদি নদীতে পায়েলের মরদেহ ভেসে ওঠে। এই ঘটনায় বাসের চালক জামাল হোসেন, হেলপার ফয়সাল ও সুপারভাইজার জনিকে আটক করা হয়। এর মধ্যে সুপারভাইজার জনি গতকাল মুন্সীগঞ্জের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে জনি বলেন, ভোর রাত ৪টার দিকে হানিফ পরিবহনের বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়ার ভাটের চর ব্রিজের কাছে যানজটে পড়ে। পায়েল তখন প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বাস থেকে নিচে নামেন। হঠাৎ বাসটি চলা শুরু করলে পায়েল দৌড়ে বাসে উঠতে চান। কিন্তু দরজায় বাড়ি খেয়ে নাক, মুখ ফেটে গিয়ে অচেতন হয়ে বাইরে পড়ে যান। তাঁরা পায়েলকে মৃত ভেবে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেন। এরপর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
এদিকে পায়েলের মরদেহ উদ্ধারের পর নাক মুখ থেতলানো ও রক্তের চিহ্ন দেখে পায়েলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করে পুলিশ। পরে ২৪ জুলাই পুলিশের সহযোগিতায় গজারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন পায়েলের মামা গোলাম সারোয়ার বিপ্লব।
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাসের চালক জামাল হোসেন, হেলপার ফয়সাল ও সুপারভাইজার জনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, হানিফ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব- ৯৬৮৭ নম্বরের সেই বাসটিকে জব্দ এবং হানিফ পরিবহনের মালিকপক্ষকে পায়েল হত্যা মামলায় জড়িত করা হবে।