সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ॥ নির্মানের প্রায় দেড়
যুগ অতিবাহিত হতে চললেও কুড়িগ্রামের রাজারহােেটর ১০টি আশ্রয়ন
প্রকল্পের কোন সংস্কার হয়নি। ফলে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে
আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০০৬ইং পর্যন্ত বিভিন্ন সময়
সরকারী খাস জমির উপর সরকারী অর্থায়নে উপজেলার সদর ইউনিয়নের
দূর্গারাম মৌজায় ১শ পরিবারের বসবাসের জন্য দূর্গারাম আবাসন
প্রকল্প,৪০পরিবারের জন্য দুধখাওয়া মৌজায় দুধখাওয়া গুচ্ছগ্রাম,ছিনাই
ইউনিয়নের জয়কুমোর মৌজায় ২শ পরিবারের বসবাসের জন্য জয়কুমোর
আবাসন,ওই ইউনিয়নের মীরের বাড়ি মৌজায় ৩০ পরিবারের জন্য গুচ্ছ
গ্রাম,একই মৌজায় ২০পরিবারের জন্য মীরেরবাড়ি আশ্রয়ন প্রকল্প,বিদ্যানন্দ
ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ মৌজায় ২০টি পরিবারের জন্য চর বিদ্যানন্দ আশ্রয়ন
প্রকল্প ,পশ্চিম চর বিদ্যানন্দ মৌজার ৪০টি পরিবারের জন্য পশ্চিম চর বিদ্যানন্দ
আশ্রয়ন প্রকল্প,একই ইউনিয়নের ডাংরারহাট মৌজায় ৩০টি পরিবারের জন্য
আদর্শ গ্রাম এবং ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা মৌজার
২০টি পরিবারের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প ও একই ইউনিয়নের সুলতানপাড়া গ্রামে
২০টি পরিবারের জন্য গুচ্ছগ্রাম নির্মান করা হয়। পরে ১০টি প্রকল্পে ৫২০টি
ভূমিহীন পরিবারকে এসব ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বর্তমানে এসব প্রকল্পে
৫২০টি পরিবারের ২হাজারেরও বেশি লোক বসবাস করে আসছে।
সরেজমিন দূর্গারাম আবাসন প্রকল্পে দেখা গেছে,মেঝে কাঁচা
ঘরগুলোর নীচের দিকে আয়রন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ঘরের চালের টিনে
ফুটো হওয়ায় বৃষ্টির সময় ঘরের ভিতর ঝড়ঝড় করে পানি পরে। অনেকে টিনের
নিচ দিয়ে পলিথিন লাগিয়ে রেখেছেন। দরজা গুলো ব্যবহারের
অনুপযোগী,টিনের বেড়া দিয়ে সেই সময় তৈরী ল্যাট্রিনগুলো ভেঙ্গে পঁেচ নষ্ট
হয়ে গেছে। তারপরও কেউকেউ পুরাতন কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখে তাই ব্যবহার
করছেন। ১০টি টিউবয়েলের মধ্যে ৪টিই অকেজো। আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো
এতটায় নীচু যে,ভিতরে প্রবেশ করতে হলে মাথা নীচু করে প্রবেশ করতে হয়।
ঘরের বাইরেও আঙ্গিনা অসামঞ্জস্যপূর্ন ছোট। অস্বাস্থ্যকর ও স্যাতস্যাথে
পরিবেশের কারনে আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী শিশু,কিশোর ও বয়বৃদ্ধাদের
বারো মাসেই রোগ ব্যধি লেগে থাকে বলে জানা যায়। এদিকে নির্মানের
প্রায় দেড় যুগেও এসব ঘর কখনো মেরামত করা হয় বলে জানান প্রকল্পে
বসবাসরত বাসিন্দরা।
আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা হাছেন,আজিজল ও মোফাজুল
জানান,পূর্বের ল্যাট্রিন গুলো নষ্ট হওয়ার পর এলজিএসপি’র অর্থায়নে
২টি,সরকারী অর্থায়নে ২টি ও রেডক্রিসেন্ট ১টি পাকা ল্যাটিন নির্মান
করে দিলেও ১শ পরিবারের প্রায় ৪শ মানুষের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে তা
একেবারে কম। আঞ্জু বেগম ও মনোয়ারা জানান,ভারি বৃষ্টি হলে আবাসন
প্রকল্পে প্রবেশের রাস্তাটি সহ কোন কোন ঘরের মেঝে ও আঙ্গিনায় এক
হাঁটু পানি জমে। আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আব্দুর রহমান জানান,এসব
সমস্যার চিত্র বিভিন্ন সময় অনেকেই দেখে গেলেও সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগ
গ্রহন করেনি।
উপজেলার ডাংরার আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব
আলী,সুফিয়া,ফাতেমা,হাজেরা সহ অনেকে জানান,গৃহগুলো জরাজীর্ন
,ল্যাট্রিন ও টিউবয়েল ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় তাদের নানা কষ্টের কথা।
এছাড়া কর্মহীন হয়ে তাদের অনেকে এখন মানবেতর দিনাতিপাত করছেন বলে
জানান। প্রায় একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য আবাসন,আশ্রয়ন ও গুচ্ছ গ্রাম
প্রকল্পে।
উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান হক বুলু জানান,২শ
পরিবারের আবাসস্থল জয়কুমোর আবাসনের এখন বেহাল অবস্থা। টিনের চালে
ফুটা,দরজা ও বেড়ার টিন নষ্ট হয়ে যাওয়া সহ নানা কারনে বসবাসের
অনুপযোগী আবাসন প্রকল্পটির সংস্কারের জন্য একাধিক উপজেলা প্রকল্প
বাস্তবায়ন অফিসে যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ,রাশেদুল হক প্রধান জানান,আবাসন
ও আশ্রয়ন প্রকল্প গুলো সংস্কারের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট বরাদ্দ চেয়ে
প্রস্তাবনা প্রেরন করা হয়েছে,বরাদ্দ আসলে সংস্কার করা যাবে।#