ঢাকা ঃ
‘প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই নিরাপদ সড়ক এখন মানুষের প্রাণের দাবী। মানুষ এখন আর রাস্তায় মরতে চায়না। ২৫ বছর ধরে আমি যে আন্দোলন করছি তা বাস্তবায়ন হলে আজ মানুষ রাস্তায় মারা যেতো না।’ নিরাপদ সড়ক চাই, নিসচা’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধনে এসব কথা বলেন।
সরকারের তরফ থেকে ৬টি নির্দেশনা নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ৬টি নীতি দিয়েছেন তা সঠিকভাবে পালন করা কতটা সম্ভব? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রত্যেকটি দূরপাল্লার গাড়িতে ২ জন করে চালক দেওয়ার জন্য, কোন চালককে ৫ ঘন্টার বেশি গাড়ি চালাতে না হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এতো চালক পাবো কোথায়? আমাদের দেশে অনুমতি প্রাপ্ত গাড়ি রয়েছে ৩৫ লক্ষ আর প্রশিক্ষিত চালক ১৯ লক্ষ। প্রত্যেক গাড়িতে একজন করে চালক দেবার ক্ষমতাও আমাদের নেই। সেই জায়গায় আপনার নির্দেশনা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে? সেটা আমরা জানতে চাই, জাতি জানতে চায়। আমি বারবার দাবি করেছি ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের জন্য, ইনস্টিটিউট করা হোক এবং তার জন্য জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হোক, কিন্তু তা ২৫ বছর আন্দোলন করেও করতে পারিনি।’
কঠোর আইন করার সময় চলে এসেছে মন্তব্য করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বলতে চাই এই কোমল মতি শিশুরা রাস্তায় নেমে আপনাদের জন্য কাজ করা সহজ করে দিয়েছে। এখন আপনারা কঠোর আইন করতে পারেন। এখন কঠোর একটি আইনের পক্ষে দেশের সব মানুষ। এতে করে হয়তো পরিবহন সেক্টরের কিছু মানুষ আপনাদের বিপক্ষে থাকতে পারে, কিন্তু সারা দেশের মানুষ আপনাদের পক্ষে থাকবে।’
শাস্তির ব্যবস্থা নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে, কিন্তু সর্বনিম্ন কোন সময় উল্লেখ নাই। তার মানে চাইলে ১ সেকেন্ডেরও শাস্তি হতে পারে। এমন আইন আমরা চাই না। হাইকোর্ট একটা নির্দেশনা দিয়েছিলো যে এই সাজা ৩ বছর থেকে ৭ বছর করা হোক, কিন্তু তা মানা হয়নি, বরং তাদের পক্ষে ৩ বছরই রাখা হয়েছে। তা হলে কি আদালতকে আমান্য করা হয়নি? নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছিলো যে কোনও কারণে শাস্তি আরো বাড়তে পারে। আমি বলবো, আইন করে যেমন শাস্তির বিধান রাখতে হবে। তেমনি যারা চাপা পড়ছেন তাদের চিকিৎসা ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেখা যায়নি বলে সমালোচনা হয়েছে। সেই সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘এর আগে অনেক আন্দোলনে আমি এসেছি, সেখানে অন্য রং লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যে কারণে আমি শিশুদের সাথে মাঠে নামিনি। আমি চেয়েছি শিশুরাই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাক। এই আন্দোলন যেন নষ্ট না হয়। আমি তোমাদের বলবো, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাও। তোমরা একটি গাড়িও ভাঙ্গবে না। কারণ তোমরা একটি গাড়ি ভাঙলে সুযোগসন্ধানীরা ১০টি গাড়ি ভাঙবে। আমি ছিলাম আছি, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকবো।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা যেন আগামী রোববার থেকেই কার্যকর করা হয়। যারা লাইসেন্স চেক করছেন তাদেরই লাইসেন্স নেই, এটা অনেক লজ্জাজনক। মন্ত্রীরা উল্টোপথে গাড়ি চালান এটা দেখে জাতির লজ্জা হওয়া উচিৎ। আপনার সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত, বলা উচিত এমন কাজ আমরা আর করবো না। তাদের দাবী মেনে নিয়ে তাদের বাসায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কাউকে দেখা যায়নি। এমনকি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান মানবন্ধনে যুক্ত হবেন জানালেও, তিনিও অনুপস্থিত ছিলেন।
গত রোববার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে মিরপুর থেকে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে আসছিল। এ সময় ফ্লাইওভারের শেষ দিকে, রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল একদল শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নেমেই দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন।
নিহতরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম।
ওই ঘটনার পর থেকেই বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। টানা কয়েক দিনের এই বিক্ষোভের জেরে রাজধানীর ঢাকা প্রায় অচল হয়ে যায়।