শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ওয়েদ্দাদিঘী এলাকায় বৃদ্ধ
নারী সুফিয়া খাতুন (৭০) নিহতের ঘটনায় চিহ্নিত
আটজনসহ অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে।
নিহতের ছেলে শহীদুল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে
তার অপর ছেলে সাহিদসহ নিরপরাধ প্রতিবেশীদের অভিযুক্ত
করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন গ্রামবাসী।
আকতার হোসেন (৪২) নামে স্থানীয় এক ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ীকে এ ঘটনায় জড়ানোর অভিযোগ করেছেন তার
পরিবার। এর প্রতিবাদে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে
শ্রীপুর পৌর ঈদগাহ মাঠ এলাকায় সমবেত হয়ে
ব্যবসায়ীর পরিবার ও গ্রামবাসী এর প্রতিবাদ করেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় দিঘীরপাড় জামে
মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল হালিম জানান, ঘটনার
সময় ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন, চা বিক্রেতা ইজ্জত আলী,
কৃষক হাসমত আলীসহ তারা বেশ কয়েকজন দিঘীর
মসজিদ ঘাটে বসেছিলেন। সেখানে বসেই
মুঠোফোনে বৃদ্ধা সুফিয়া আক্তারের নিহতের খবর পান।
প্রতিবেশী সমলু বেপারীর ছেলে হাসমত আলী(৬০) বলেন,
ঘটনার সময় ইমাম সাহেবকে নিয়ে আমরা দিঘীর ঘাটে
আলাপচারিতায় ছিলাম। অথচ আকতারকে জড়ানোর
ঘটনায় আমরা বিষ্মিত হয়েছি।
প্রতিবেশী আব্দুল হামিদ(৭০), রহিমা খাতুন(৭০), ফজলুল
হক (৫৫), আব্দুস ছালাম (২৯) আকতার হোসেনকে
ফাঁসানোর ঘটনা শুনে তারাও বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
নিহতের কয়েক ছেলে নিজেদের মধ্যে ঘটনা ঘটিয়ে
প্রতিবেশীদেরকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবী করেন তারা।
সাহিদের স্ত্রী কোহিনূর বলেন, নিহত সুফিয়া তার
শ^াশুড়ী। ঘটনার সময় ওই বাড়িতে তার শ^াশুড়ীর ছেলে
সাত্তার, জুয়েল, মোন্তাজ, শহীদুল্লাহ ও নাতি হৃদয় ছিলেন।
জমিজমা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক
পর্যায়ে অন্যান্য ভাইয়েরা জুয়েলকে মারধোর করতে
এগিয়ে যায়। এসময় জুয়েল আত্মহত্যার জন্য গলায় ফাঁস
লাগাতে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ দৃশ্য দেখে তার শ^াশুড়ী
ছেলেদের উদ্দেশে “তোরা কি করছিস, আমাকে বাঁচা”
বলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে আহত অবস্থায় তাকে
উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া
হয়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফারজানা
শারমিন জানান, নিহত নারীকে হাসপাতালে আনার
আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে শরীরে কোথাও কোন
আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
সোমবার নিহতের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করে কারও
সন্ধান পাওয়া যায়নি। সকল ঘরে তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, সাজানো মামলা করে গত তিনদিন
যাবত নিহতের ছেলেরা বাড়িছাড়া রয়েছে।
ব্যবসায়ী আকতার হোসেনের কন্যা মৌসুমী ও স্ত্রী নূর
আম্বিয়া সোমবার দুপুরে ওয়েদ্দাদিঘীর পাড়ে সংবাদ
সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, বিবাদের সময় সুফিয়া
আক্তারের বাড়িতে বা আশপাশে আকতার হোসেন ছিলেন
না। পূর্ব বিরোধের জেরে ওই ব্যবসায়ীকে ওই ঘটনায়
ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। তারা বলেন, মৌসুমীকে কলেজে
যাতায়াতের পথে নিহত নারীর ছেলে ইন্তাজ মোল্লা ও তার
স্বজনেরা উত্যক্ত ও নানা ধরনের ভয় ভীতি ও হুমকি দিত। এ
বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শ্রীপুর
থানায় গত বছরের ২০ মে আকতার হোসেন একটি
সাধারণ ডায়েরী (নং ৮৮১) করেন।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুর রহমান
মল্লিক জানান, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শহীদুল্লাহ বাদী
হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে চিহ্নিত
আটজনসহ অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তদের
গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে। তবে মামলার বাদী ও নিহতের ছেলে
শহীদুল্লাহকে ফোন করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে
না। শহীদুল্লাহর ছেলে ফোন ধরছে। তারা বাড়িতে থাকেন
কিনা তা তার জানা নেই।
প্রসঙ্গত, ৩০ জুলাই সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে দশটার
দিকে নিজ বাড়িতে বিবাদে জড়িয়ে সুফিয়া আক্তার
(৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার
১নং ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া গ্রামের রুস্তম আলীর স্ত্রী।