সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ঃ
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রাক্ষুসী তিস্তার কড়াল গ্রাসে তিনটি
ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন
হয়েছে। এসব পরিবারের সদস্যরা নানা কষ্টে যত্রতত্র দিনাতিপাত করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের
চতুরা,কালিরহাট,হংসধর,তৈয়বখাঁ,নাজিমখান ইউনিয়নের সোমনারায়ন
এবং ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম,সরিষাবাড়ি ও বগুড়াপাড়া
গ্রামে গত ২সপ্তারে অব্যাহত নদী ভাঁঙ্গনের শিকার হয়েছেন শতাধিক পরিবার।
এসব গ্রামে বাড়ি ঘরের পাশাপাশি ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে শতশত একর ফসলি
জমি ও গাছপালা। শরিষাবাড়ি বগুড়াপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার,আব্দুর
রহিম,আউয়াল,মোক্তার হোসেন সহ চলতি মৌসুমে নদী ভাঁঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ
অনেকে জানান,তাদের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পানি
উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এপর্যন্ত নদী ভাঁঙ্গন রোধে তাৎক্ষনিক কোন পদক্ষেপ গ্রহন
করেনি। একই গ্রামের তাজ উদ্দিন ও কোরবান আলী জানান,নদী ভাঙ্গনে
ক্ষতিগ্রস্থদের অনেকে বাৎসরিক ৫শ দরে এক শতক জমি ভাড়া হিসেবে নিয়ে
ঠাঁই নেয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া তিস্তা নদীর তীব্র ভাঁঙ্গনে হুমকীর
সম্মুখীন হয়ে পড়েছে তিনটি ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের সহ¯্রাধিক
পরিবার। তাছাড়া বুড়িরহাট বাজার, গাবুর হেলান সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়,তৈয়বখাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়ন ভবন,কালিরহাট
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝাপাড়া বালিকা মাদ্রাসা, বুড়িরহাট
মসজিদ, বুড়িরহাট রাস্তা ও স্পার বাঁধ, তৈয়বখাঁ গ্রামের তিনটি মন্দির সহ
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পরেছে।
এদিকে প্রতিবছর তিস্তা নদী ভাঙ্গনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ
ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। বিগত এক যুগে রাক্ষুসে তিস্তা কেড়ে
নিয়েছে উপজেলার বিদ্যানন্দ,ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও ইউনিয়নের চার হাজারেরও
বেশী পরিবারের ঘরবাড়ি,বসত ভিটা ও ফসলী জমি। সর্বশান্ত এসব পরিবারের
অনেকেই আজ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে তিস্তা পাড়ের
সর্বহারা মানুষ গুলোর নানা কষ্টে দিন কাটছে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত এক যুগে রাজারহাট উপজেলার
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের
ডাংরারহাট,গাবুরহেলান,পাড়ামৌলা,রামহরি,চুতরা,চরবিদ্যানন্দ,রতি ও
তৈয়বখাঁ মৌজার প্রায় তিন হাজার পরিবার, ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের
বুড়িরহাট,সরিষাবাড়ি,খিতাবখাঁ,গতিয়াশাম এবং নাজিমখান ইউনিয়নের
সোমনারায়ন মৌজার প্রায় এক হাজার পরিবারের ঘড়বাড়ি,ফসলী জমি এবং
বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের নদী ভাঁঙ্গন কবলিত
গ্রাম গুলোতে ঘুরে ভাঁঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর দুঃখ দূর্দশার নানা চিত্র
পাওয়া গেছে। তৈয়বখাঁ মৌজার বিধবা সোনাবালা (৯০) বলেন, একদিন
হ্যামার সউগ ছিল,নদী ভাঙ্গনে সউগ শ্যাষ হয়য়া গেইছে। এলা হ্যামার মাথা
গুজবেরও ঠাঁই নাই,দয়া করি মাইসে (মানুষ) তার বারান্দাত থাকপের দিছে।
একই মৌজার বিধবা রতনেশ্বরী (৮০) জানান, নদী ভাঙ্গন হ্যামাক শ্যাষ করছে
,হ্যামরা এলা রাস্তার মাটিত ঘর তুলি আছি,কাম কাজ নাই,খাওয়াও
নাই,মাইসে যতখ্যানে এক মুট দেয়। আঃ ছালাম (৬০) জানান, নদী তো সউগ
নিয়্যা গেইছে,এলা ছাওয়া পোওয়া গুলাক নিয়্যা কষ্টোত আছং।
তৈয়বখাঁ মৌজার ইউ,পি সদস্য মনিন্দ্র নাথ জানান,এই মৌজায় গত
এক যুগে ভাঙ্গনের শিকার শতশত পরিবার যাদের নিজের বলতে কিছু নেই,তারা
অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে ,কিংবা রাস্তার ধারে কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই
করে নিয়েছে।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান,এক যুগে
নদী ভাঙ্গন বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে,এই ইউনিয়নের প্রায়
অর্ধেকাংশই নদী গর্ভে চলে গেছে।
উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রবীন্দ্র নাথ কর্মকার জানান,
,বিভিন্ন সময় নদী গর্ভে বিলীন হওয়া পরিবার গুলোকে ভিজিএফ সহ
বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলেও তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার মতো
ফান্ড আমরা পাই না।
নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষরা তিস্তার ভাঁঙ্গন রোঁধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের
নিকট দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।