নুরুল আলম ডাকুয়া, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউই খোঁজ রাখেনি ১্#৩৯;শ ২২ বছর বয়সের
প্রবীণতম বৃদ্ধা ্#৩৯;ইছিমন বেওয়্#া৩৯;র। যিনি মুক্তিযুদ্ধকালে মাতৃ স্নেহ-মমতায় খোঁজ-খবর
রেখেছিলেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার। আজ তিনি মৃত্যু শয্যায় নিথর পড়ে আছেন গৃহের
ছোট্ট একটি বাংলা ঘরে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচীয়া মীরগঞ্জ বালাপাড়াস্থ
হাজীর মোড় (মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন) মৃত তমিজ উদ্দীন ব্যাপারীর স্ত্রী এ প্রবীণ
বৃদ্ধা ইছিমন বেওয়ার ভাগ্যে বর্তমানে চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা, খাবার পথ্যও
জুটছেনা তাঁর সংসারের আয় থেকে। তাঁর স্বামী তমিজ উদ্দীন ১্#৩৯;শ ৫ বছর বয়সে মারা যান
বিগত প্রায় ২০ বছর আগে। মরহুম তমিজ উদ্দীন- ইছিমন বেওয়া দম্পত্তির সংসার জীবনে ৬ ছেলে
ও ৩ মেয়েসহ মোট ৯ সন্তান থাকলেও স্বাধীনতা যুদ্ধেকালে নিজ সন্তানদের তেমন কোন খোঁজ-
খবর না রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী অসংখ্য দামাল ছেলেদের জন্য তিনি করেছেন অক্লান্ত
পরিশ্রম। রান্না করে খাওয়ানোর পর তাদেরকে মাতৃ স্নেহ- মমতায় রেখেছিলেন।তাঁদের শুধু
সেবা-যতœই না; তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যুদ্ধে জয়ী হতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
পাকবাহিনী ও পাকবাহিনীর দোষরদের অবস্থানসহ গতি পথ নিশ্চিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহণকারী সেই দামাল ছেলেদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। পাড়া-পড়শী ও তাঁর
সন্তানেরা এসব ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন এই প্রবীণ বৃদ্ধার সামনে। তা শুনে তাঁর
দ্#ু৩৯;চোখে পানি ঝড়ছিল। সেই সঙ্গে তিনি কিছু বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, বলতে পারছিলেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান প্রবীণ এই দেশ প্রেমী বৃদ্ধা ইছিমণ বেওয়াকে গত ৫ দিন থেকে দেখতে না
পেয়ে খোজ-খবর নিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন প্রবীণ বৃদ্ধা অসুস্থ্য হয়েছেন।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেয়ে অসুস্থ্য প্রবীণ এই বৃদ্ধাকে তিনি দেখতে আসেন।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ
থেকে তাঁকে (ইছিমন বেওয়াকে) বয়স্ক ভাতা কার্ড দেয়া হয়েছে। তিনি পারিবারিক
পর্যায়ের সব কিছুই জানেন। বলে খোঁজ-খবর রাখেন। চেয়ারম্যানের এমন সহানুভূতির কথা
জানিয়ে বৃদ্ধার ছেলে আবুল হোসেন, ভগ্নে, নাতিসহ স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান তো
খোঁজ-খবর ঠিকই রাখেন। কিন্তু, অনেক বড় পরিবার। তার মাঝে বার্ধক্যজনীত কারণে অভাবের
পরিমাণ অনেক। তারপর, চিকিৎসা। বৃদ্ধার পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতা
যুদ্ধকালে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোগিতা করা ছাড়াও তাঁদেরকে সেবা-যতœ, মাতৃ
স্নেহ-মসতায় খোঁজ রেখেছিলেন তিনি। অথচ, স্বাধীনতার প্রায় ৪৬ বছরেও কেউই খোঁজ
রাখেনি এই বৃদ্ধা ইছিমন বেওয়্#া৩৯;র। এমনকি, মুক্তিযোদ্ধা সহযোগি হিসেবেও তাঁকে
কেউই মনে রাখেনি। তাঁকে দেখতে আসা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে
গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন সিএলপি বাঁধের রাস্তার ধারে বসবাসকারী বৃদ্ধার ২য় ছেলে নুরুল
ইসলামকে দেখেতে গিয়ে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। মা- ছেলের এই বার্ধক্য দশা। মরহুম তমিজ
উদ্দীন- ইছিমণ বেওয়া দম্পত্তির সন্তানদের মধ্যে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান প্রথম ছেলে নূর
হোসেন, দ্বিতীয় ছেলে নুরুল ইসলাম (৮১) বার্ধক্য জনীত কারণে তিনিও অসুস্থাবস্থায় নিজ
গৃহেই শয্যাসয়ী। তিনি থাকেন আলাদা বাড়িতে। তৃতীয় সন্তান হালিমা বেগম (৭৯) তাঁর
স্বামীর বাড়িতে। তিনি অনেক আগেই বিধবা হয়েছেন। চতুর্থ সন্তান খয়রন নেছা ৭৫ বছর
বয়সে কিছু দিন আগে মারা গেছেন। ৫ম সন্তান নুরুজ্জামান (৭১)। তিনি ২০০৮ সালে
মৃত্যু বরণ করেন। তারপর মারা যান ৬ষ্ঠ সন্তান জাহানারা বেগম ৬৯ বছর বয়সে। ৭ম সন্তান আবুল
হোসেন (৬৭) একটু চলাফেরা করতে পারেন। ৮ম সন্তান নূরুল হক। তিনি চলতি বছরে মারা যান।
আর ৯ম সন্তান মহুবর রহমান জীবিত রয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান,
মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন। তাই, তাঁর অবদান রয়েছে অনেক। তিনি ও তাঁর
স্বামী সংসার জীবনে প্রিয় খাদ্যাভাস ছিল -প্রত্যেক দিন সকালে পান্তা ভাত, বিচি কলা আর
রসুন। এমন কথাই জানেন তিনি।