নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবার বেহাল অবস্থা। কোন ভাবে জোড়াতালি দিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। দুরদুরান্ত থেকে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। গরিব ও অসহায় রোগীদের সহায় সম্বল বিক্রি করে শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে উচ্চ ফি দিয়ে চিকিৎসক দেখাতে বাধ্য হচ্ছেন। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবল সংকট আর আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছেন। ওষুধের পরিমাণও অপ্রতুল। এ কারণে রোগীদেরকে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়াও চিকিৎসক ও জনবলের সঙ্কটের কারনে অনেক ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলি অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই রুগ্ন তাই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য অনুকূল পরিবেশ না থাকায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে এর কার্যক্রম।
তবে সদ্য যোগদানকারী ডাঃ মাহমুদুর রহমান সম্পূর্ন নতুন ধাচে এটিকে সাজানোর চেষ্টা করছেন। নানা অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তবে নানা সমস্যা বিদ্যমান থাকায় সার্বিক ভাবে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্বাস্থ্য সেবায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই হাসপাতালকে আধুনিক মানের করে গড়ে তুলে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবী।
বর্তমানে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জনের ৬টি পদ থাকলেও ৬টি পদই খালি পড়ে আছে। এছাড়াও সুইপারের ২টি পদ, নিরাপত্তা প্রহরীর ১টি পদ, ওয়ার্ড বয়ের ৩টি পদ, আয়ার ১টি পদ, অফিস সহকারীর ২টি পদ, সিনিয়র নার্সের ১টি পদ, উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে (এমও) ৫টি পদ, স্বাস্থ্য সহকারী ১৫টি পদ, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৪টি পদ খালি রয়েছে।
মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে আসা উজানী গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার প্রধান ও একমাত্র ভরসা। কিন্তু এখানে জরুরি বিভাগেরই মাঝে মধ্যে জরুরি অবস্থা দেখা দেয়।
ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের ডিউটি থাকলেও তারা ওই সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডিউটি না করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রুমে বসেই প্রাইভেট ভাবে রুগি দেখে থাকেন। তা ছাড়াও অনেক চিকিৎসক ডিউটি টাইমে সরকারি বাস ভবনে নিজস্ব চেম্বারে এবং কল পেলেই ছুটে যান ক্লিনিক গুলিতে। ডা: মাসুদ করিম, ডা: রায়হান ইসলাম শোভন, ডা: মনিরুজ্জামান, ডা: বিশ্বজিৎ দাস, ডা: নাজিমুল মুবিন, ডা: মনিমুল হাবিব এ সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও ওই সকল চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রুগিদের সাথে দূর্ব্যাবহার করা, কোন সময় না মানা, নাইট ডিউটি না করা, অফিস টাইমে বাসায় বসে রুগি দেখা, হাসপাতালে বসে ভিজিট নিয়ে রুগি দেখা, হাসপাতালের স্টাফদের সাথে দূর্ব্যাবহার করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
পরপর দুবার সরেজমিন ওই হাসপাতালে গেলে ডা: মাসুদ করিমকে তার কর্মরত রুমে পাওয়া যায়নি। তা ছাড়াও তার ব্যবহৃত মোবাইলে বার বার ফোন করা শর্তেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতার আতœীয়ের পরিচয়সহ স্থানীয় লোক হবার সুবাধে ডা: মাসুদ করিম কোন সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে নিজে তার খেয়াল খুশিমত চলাফেরা করে থাকেন। তা ছাড়াও একজন সাংবাদিক সংবাদে ডা: মাসুদ করিমের নাম প্রকাশ না করার জন্য বার বার অনুরোধ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, ডা: মাসুদ করিম স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতার আতœীয় হওয়ার কারনে এবং মুকসুদপুরের বাসিন্দা হওয়ার কারনে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। তা ছাড়া তিনি পর পর ২-৩ বার অন্যত্র বদলী হলেও কোন এক কালো হাতের ইশারায় ও উপর মহলে ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে বার বার এ হাসপাতালেই থেকে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুকসুদপুরের কয়েকজন সংবাদকর্মী জানান, ডা: মাসুদ করিম দীর্ঘ দিন যাবত ধরে এ হাসপাতালে থাকার কারনে তিনি তার নিজস্ব গতিতে চলাফেরা ও কাজকর্ম করে থাকেন। তিনি সরকারি কোন নিয়ম কানুন মানেন না। তিনি সরকারি হাসপাতালের রুমে বসেই ফি নিয়ে রোগি দেখে থাকেন। জরুরী বিভাগে ডিউটি থাকলেও তিনি বাসায় রুগি দেখায় ব্যস্ত থাকেন। তারা আরো বলেন, স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার আতœীয় হওয়ার কারনে তিনি কয়েকজন সংবাদকর্মী, কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারন মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন।
ডা: মাসুদ করিমের বদলীসহ মুকসুদপুর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সাধারন মানুষসহ মুকসুদপুরের অভিজ্ঞমহল।