নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বানিয়ারচর গ্রামে সরকারী খাস জমি দখল করছে আমেরিকা প্রবাসী এলিও বৈরাগী ও তার স্ত্রী পারুল বৈরাগী (মেরী)। দখলকৃত এ সব জমি স্থায়ী ভাবে ভোগ করতে মেরী স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীকেও হাত করে রেখেছেন। নিজেও রাতারাতি রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়ার জন্য আওয়ামীলীগ নেতাদের ছবি সম্বলিত নিজের বিভিন্ন পোস্টার ও বিলবোর্ড এলাকার বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গিয়ে রেখেছেন। অথচ এলাকায় মেরী’র বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এলিও বৈরাগী ও তার স্ত্রী পারুল বৈরাগী (মেরী) দু’জনেই আমেরিকায় ছিলেন। গত বছর ১৯ এপ্রিল তারা দেশে আসেন। এরপর মেরী আর আমেরিকায় ফিরে যাননি। দেশে এসেই তিনি টাকার প্রভাবে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেন। এরপর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বানিয়াচর গ্রামের মহাদেব হালদারের ছেলে মনীষ হালদারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার দখলকৃত ৩ কাঠা খাস জমি দখল করেন। মনীষ বাধ্য হয়ে রাতের অন্ধকারে দেশ ছাড়ে। আর মেরী সেখানে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। এরপর মেরী এমবিআর (মাদারীপুর বিল রুট) ক্যানেলের পাড়ে বসবাসরত মৃত অভয়াচরণ বিশ্বাসের ছেলে সিমন বিশ্বাসের সাড়ে ৮ কাঠা জমি বিনা পয়সায় দখল হস্তান্তর করে নেন। এর ক’দিন বাদেই সিমন বিশ্বাসের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে।
সিমন বিশ্বাসের দু’ভাই যুগল বিশ্বাস ও জিহুদা বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেছেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার লাশ পারুল বৈরাগী (মেরী) আমাদেরকে দেখতে দেয়নি। তড়িঘরি করে তাকে দাফন করা হয়েছে। আমার ভাইকে যারা শেষ গোসল করিয়েছে, তারা বলেছে লাশের গায়ে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমার ভাইয়ের মৃত্যু সাধারণ ছিল না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ আমার ভাইয়ের বউও মেরীর বাড়ীতে মারা যায়। তার লাশও সে আমাদের দাফন করতে দেয়নি।
সিমন বিশ্বাসের ছেলে দুলাল বিশ্বাস সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, তার বাবার মৃত্যুর পর তার সৎ মাকে দিয়ে সুকৌশলে মেরী ওই জমি দখল হস্তান্তর করে নেয়। ক’দিন বাদে সেই মায়েরও মৃত্যু ঘটলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে তার দাফনও মেরী তড়িঘরি করে শেষ করে এবং চক্রান্ত করে ওই জমি নিয়ে নেয়। এরপর থেকে দুলাল নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে পারুল বৈরাগী (মেরী) বলেন, আমি আমেরিকা থেকে কোটি কোটি টাকা এনে এলাকাবাসীর সেবা করছি। টাকা দিয়ে আমি আমার মামা শিমন বিশ্বাসকে সাহায্য করেছি। মামা-মামীকে চিকিৎসা করিয়েছি। তাই সে-ই আমাকে এসব জমি বিনা পয়সায় দখল হস্তান্তর করে দিয়ে গেছে। জোরপূর্বক বা ক্ষমতার জোর দেখিয়ে আমি এসব জমি নেইনি।
এদিকে, গত শনিবার বিকেলে জলিরপার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল বৈড়াগী, কাশালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও সিন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দোহাই দিয়ে পারুল বৈরাগী (মেরী) ও তার মামা মণীষ হালদারকে ওই জমিসহ প্রায় ২৪ শতক সরকারি খাস জমি ভাগ-বাটোয়ারা করে দেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা ইউপি-চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সরকারী জমি কেউ বিক্রি করতে পারে না। কে কী ভাবে কিনেছে বা দখল হস্তান্তর করেছে তা তার জানা নেই।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আখতার হোসেন শাহীন বলেছেন, গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত এমবিআর ক্যানেলের দু’পাড়ের অধিকাংশ জমির মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। অবৈধ দখলদাররা এসব জমি একজন আরেকজনের কাছে বিক্রীও করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে গোলযোগ, মারামারি, মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কলহ লেগে আছে কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় জমিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ দখলদারদের হাতেই রয়েছে। তারা যদি ব্যবস্থা নেয়, তাহলে এসব অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ব্যাপারে আমরা উর্দ্ধতণ কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত অবহিত করেছি এবং থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে নির্বিকার। যার ফলে এসব জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ তো হচ্ছেই না; বরং দিনে দিনে অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।